মৌসুমের শুরুতেই সুন্দরবনের শুঁটকির আবাসভূমি তথা দুবলার চরে ব্যস্ততা বেড়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাগরজলের নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে ভেসে আসে উদাস কণ্ঠের সুর। কখন বা অক্ষেপ আবার কখন আনন্দ ঝরে পড়ে সুর মুর্ছনায়। শুঁটকি শ্রমিকরা নিজেদের ক্লান্তি ভুলে যেতে সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা গানের সুর ভেসে আসে।
চারিদিকে অথৈ জলরাশি। তারই মাঝখানে দুবলার চর। এই দুবলার চরেই পাঁচমাসের ঘরবসতি পেতে বসেছে শুঁটকি শুটকি শ্রমিকেরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব শ্রমিকেরা কাজের সন্ধ্যা দুবলার চরে কাজ করতে আসেন। এই দুবলার চরে ভীড় করতে শুরু করেছেন জেলে, মহাজন ও শ্রমিকরা।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ভোরের কুয়াশা ভেদ করে শ্রমিকের কর্মব্যস্ততায় মুখরিত হয়ে ওঠে দুবলার চর। তাদের কেউ ঘর বাঁধছেন, আবার কেউ কেউ মৎস্য আহরণে নেমে পড়েছেন সাগরে। কেউ কেউ মাছ নিয়ে চরে ফিরেছেন। কেউ বা সেগুলো বাছাইয়ের পর মাচায় শুকাতেও দিচ্ছেন।
দীর্ঘ পাঁচ মাস এমনি চিত্রকল্পে সরগরম থাকবে দুবলার চর। দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী ঘিরে সংক্ষিপ্ত জীবনের নানা গল্পগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। স্বজন রেখে পেটের দায়ে মহাজনের ডাকে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ফণাকে অবলিলা সামাল দিয়ে জাল নিয়ে নোনা জলে নামে মৎস্য আহরণে। তাদের অনেকেই স্বজনদের দুঃখকে বুকে চেপে পাঁচটি মাস কাটিয়ে দেবে।
এই পাঁচ ঘিরে দুবলার চরের শুঁটকি নগরী তথা পল্লীতে বহু সুখ-দুঃখের স্বপ্নরা ঘুরে ফিরে। এখানে ঘুমড়ে কেদে ওঠা অনেক মনের খবরের হয়তো স্বাক্ষী কেবল সাগরের অর্থৈ জলরাশি! উদার আকাশে মিলিয়ে যায় অনেকের দীর্ঘ শ্বাস।
এর আগে উপকূলের জেলেরা শুঁটকি মৌসুম ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় জাল, নৌকা মেরামত ও সব ধরনের সরঞ্জাম প্রস্তুত করেন। এরপর বিভিন্ন এলাকার জেলে ও শ্রমিকরা দুবলার উদ্দেশ্যে জড়ো হন মোংলায়। বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে বনবিভাগের পাস নিয়ে চরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তারা।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) রানা দেব বলেন, বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা পাঁচ মাস সেখানে থাকতে হবে হাজারো জেলে ও শ্রমিককে। সাগরপাড়ের এ চরে তাদের থাকতে অস্থায়ী ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল ও মাচা তৈরি করা হচ্ছে।
স্থাপনা নির্মাণে সুন্দরবনের কোনো গাছপালা ব্যবহার করা যাবে না। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দুবলার চরে যাওয়া জেলেরা সঙ্গেই নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আলোরকোল অস্থায়ী ক্যাম্প ও দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদার ভাষায় উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা গভীর রাতে রওনা হয়ে ভোরে পৌঁছান দুবলার চরে। তারা চরে ঘর বাঁধতে শুরু করেছেন। জেলেদের থাকার ঘর বাঁধতে সময় লাগবে দু-তিনদিন।
এদিকে ভোরে চরে এসেই ঘর, মাঁচা ও চাতাল তৈরিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নামিয়ে রেখে জাল এবং নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। ভোরের প্রথম খেপের মাছও দুপুরে চলে এসেছে চরে। চরে সেই মাছ বাছাই করে শুকাতেও দিয়েছেন জেলেরা।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :