AB Bank
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সন্তানদের স্মার্টফোন দেয়ার আগে ভাবুন


Ekushey Sangbad
সালমা আফরোজ
০৬:১০ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০২৪
সন্তানদের স্মার্টফোন দেয়ার আগে ভাবুন

শিশু সন্তানদের মোবাইল ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে তার অভিভাবককে অবশ্যই অনেক ভাবতে হবে। ১৮ বছর বয়সের আগে সন্তানের কেন মোবাইল ফোন লাগবে বা এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। এ ফোন তারা ২৪ ঘন্টায় কত সময় ধরে ব্যবহার করছে। এতে তাদের কি কি ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন মানেই তো স্মার্টফোন। এর মাধ্যমে চলে নগ্ন বা অর্ধ নগ্ন ছবির আদান প্রদান। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে অশ্লীল বার্তা প্রেরণ। ১২ থেকে ১৭ বছরের ১৫ শতাংশ তরুণ-তরুণীই না বুঝে এসব করছে। এসব ক্ষেত্রে বাবা মা দুজনকেই সচেতন হতে হবে। মোবাইল ফোনের কারণে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ফেসবুক নেশা চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে তারা অনায়াসে নানা দেশের অজানা ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারছে। চরিত্র গড়ার আগেই নষ্ট হচ্ছে তাদের চরিত্র। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে লেখাপড়ায় এবং পরিবার-সমাজে।

দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার তো বাড়ছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু-কিশোরীদের হয়রানি। কিশোররা কিশোরীদের ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে কত কিশোরী আত্নহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তা অনেকের অজানা। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা, নগ্নছবি এমএমএস করা, ব্লু-টুথের মাধ্যমে ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া এ ধরনের বিব্রতকর ঘটনার অহরহ মুখোমুখি হচ্ছে কিশোরীরা। যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ যৌন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা।
বেসরকারি কোম্পানীর এক কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন তিনি তার ১৪ বছর বয়সের মেয়েকে স্মার্টফোন কিনে দিয়েছেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। কিন্তু এই ফোন একদিন কাল হয়ে দাঁড়াল যখন ওই মেয়ে শুরু করে দিল প্রেম। 

বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা শারমিন নাহার তার নবম শ্রেনিতে পড়া মেয়েকে বাসা থেকে একদমই বের হতে দেন না। মেয়ে তার স্কুলেই পড়ে তাই তারা একসাথেই যাওয়া আসা করে। তাই নিশ্চিন্তে দিলেন কিনে একটা ফোন। কিছুদিনের মধ্যে মেয়ে প্রেমে পড়ল একাদশ শ্রেনিতে পড়া এক ছেলের। রাত দিন মেসেঞ্জারে চলে কথা। কিন্তু শারমিন বুঝেন না মেয়েকে বাইরের জগতে একটু হলেও মিশতে দেওয়া উচিত। 
রাজনীতিবিদ আফরোজা আক্তারের মেয়েরা তার স্মার্টফোন ব্যবহার করত। একদিন তিনি আড়াল থেকে দেখেন তারা ইউটিউবে ঢুকে অশ্লীল বিদেশি সিরিয়াল দেখছে। এরপর তিনি কৌশলে তাদের হাতে ফোন দেওয়া বন্ধ করলেন।

গৃহবধূ সানজিদার ছোট মেয়ে রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনের পর্নোসাইটে নানা ছবি দেখে। এখন আর মেয়েকে ঠিক পথে আনতে পাচ্ছেন না।

বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এমন এক মা তার কষ্টের টাকায় স্মার্টফোন কিনেছেন। তার একমাত্র ছেলে কার্টুন দেখতে চায়। উনি তো আর মানা করতে পারেন না। যখন দেখলেন ছেলেটা মাঝে মধ্যেই ইউটিউবে চলে যায় তখন থেকে তিনি মোবাইল ফোনে এমবি কেনা বন্ধ করে দেন।

১৮ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিয়ম নেই। অথচ আজকাল দেখা যাচ্ছে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সপ্তম শ্রেনির শিশু-কিশোররাও ব্যবহার করছে আধুনিক প্রযুক্তির সব মোবাইল ফোন। তাদের অভিভাবকদের কথা ছেলে মেয়েরা স্কুল-কলেজ কোচিং সেন্টারে যায় তাই তারা কখন কোথায় আছে জানান জন্য মোবাইল ফোন দিতে হয়। তাহলে তো ছোট কোন ফোন দিলেই হয়, স্মার্টফোন কেন? 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তানকে স্মার্টফোন দেওয়ার অর্থ হলো, তাদের হাতে এক বোতল মদ কিংবা এক গ্রাম কোকেন তুলে দেওয়া। কারণ, স্মার্টফোনের আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই বিপজ্জনক। দুই মিনিট স্থায়ী একটি মোবাইল কল শিশুদের মস্তিষ্কের হাইপার অ্যাক্টিভিটি সৃষ্টি করে, যা কিনা পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের মস্তিষ্কে বিরাজ করে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায় দ্বিগুণ, ব্যবহারকারীর স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তের চাপ বেড়ে যায়, দেহ ধীরে ধীরে ক্লান্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে এমনকি নিয়মিত ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। স্ক্রিনের রেডিয়েশন প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, শিশুদের জন্য তা আরও বেশি মারাত্মক ক্ষতিকর, যা কিনা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যাহত করে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশের আরও উন্নতি হবে, দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন তত বেশি হবে। এক্ষেত্রে বাবা মা অর্থাৎ অভিভাবকদেরই সাবধান হতে হবে। সন্তানরা যা চাইবে তাই দিলে হবে না, অভিভাবকদের ভাবতে হবে, অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। অনেক সময় মা-বাবার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও অসচেতনতার কারণে সম্ভাবনাময় সন্তানরাও বিপথগামী হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে দেয়া যাবে না। প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে।

 

Link copied!