২০১৯ সালের একেবারে শেষের দিকে চীনের উহান শহর থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্বে। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে পারেনি কোনো দেশই। লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গিয়েছেন অকালেই। সম্প্রতি চীন থেকেই আরেক ভাইরাস এইচএমপি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে।
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এই প্রজন্ম চাক্ষুষ করতে পারলেও বিশ্বের ইতিহাসে আছে এমন অনেক মহামারির ভয়াবহতা। যার তাণ্ডবে মানুষ মারা গিয়েছে, ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়েছে আরও কয়েক বছর।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই কয়েকটি ভাইরাস সম্পর্কে -
স্প্যানিশ ফ্লু
স্প্যানিশ ফ্লু, ১৯১৮ ফ্লু মহামারী হিসাবেও পরিচিত। একটি অস্বাভাবিক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জাঘটিত বৈশ্বিক মহামারি। ১৯১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ১৯২০ পর্যন্ত ৫০ কোটি মানুষের মাঝে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস। যা সেই সময়ে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। আনুমানিক ১.৭ থেকে ৫ কোটি বা কোনো কোনো হিসাবে ১০ কোটির মত মানুষ এতে মারা গিয়েছিল। যে কারণে এটিকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যদিও মনোবল বজায় রাখার জন্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আয়োজক জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক জরিপে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখায়।
ইবোলা
১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। মার্বুগ ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যা ১৯৬৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। উভয় ভাইরাসই ফিলোভিরিডায়ে পরিবারের সাথে জড়িত ও মানবদেহে রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী। ইবোলা ভাইরাসের পাঁচটি ভিন্ন নাম রয়েছে - ইবোলা-জায়ারে, ইবোলা-সুদান, ইবোলা-আইভোরি কোস্ট, ইবোলা-রেস্টন এবং ইবোলা-বুন্দিবুগিও। এ নামকরণগুলো ছড়িয়ে পড়া এলাকার নামানুসারে হয়েছে। ভয়ংকর এই ইবোলাভারাসে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশের মতো। ২০১৪ ও ২০১৬ সালের মধ্য আফ্রিকায় বড় প্রাদুর্ভাবে অন্তত ১১ হাজার মানুষ মারা গেছে। ইবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুই অবধারিত। এই অসুখের ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি এখন পর্যন্ত। তবে একটা ভালো খবর হলো খুব সংক্রামক নয় এটি। ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। লক্ষণগুলি ধরা পড়ে ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর, যেগুলি হল জ্বর, গলা ব্যথা, পেশীর ব্যথা, এবং মাথা ধরা। সাধারণত এর পর গা গোলানো, বমি, এবং ডাইরিয়া হয়,সাথে লিভার ও কিডনীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এই জায়গাতে এসে কিছু মানুষের রক্তপাতজনিত সমস্যা শুরু হয়।
গুটিবসন্ত
গুটিবসন্ত বা স্মল পক্স ভ্যারিওলা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতো এবং এটি অত্যন্ত মারাত্মক এক ব্যাধি ছিল। মানবদেহে প্রথমে এক ধরনের গুটি বের হয় যা পরবর্তী সময়ে তিল বা দাগ, কুড়ি, ফোস্কা, পুঁজবটিকা এবং খোসা বা আবরণ ইত্যাদি পর্যায়ের মাধ্যমে দেহে লক্ষণ প্রকাশ করে। গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৭৯৬ সালে। অথচ টিকা আবিষ্কারের প্রায় ২০০ বছর পরও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে ভারতে। ১৯৭০ সালে লক্ষাধিক মানুষ রাতারাতি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী কয়েক বছরে ভারত সরকার এবং জাতিসংঘের সহায়তায় গঠিত একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালেই ভারতকে গুটিবসন্ত মুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হয়।
সোয়াইন ফ্লু
ভাইরাসটি শূকর থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে কৃষক ও প্রাণি চিকিৎসকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় এ মহামারী দেখা দেয়। এতে ১৮ হাজার ৫০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এক গবেষণায় দেখা যায়, শূকরের সঙ্গে না মিশলেও এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
পোলিও
পোলিওমাইলিটিজ এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। সচরাচর এটি পোলিও নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি এ ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হন। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ও তার অঙ্গ অবশ বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ১৯১৬ সালে পোলিও রোগ প্রথম মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সে বছর নিউইয়র্কে ৯ হাজার মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ৬ হাজার মানুষই মৃত্যুবরণ করে! নিউইয়র্ক শহর থেকে ক্রমে পোলিওর প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর বিশ্বে কত শত মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার কোনো সঠিক তথ্যও পাওয়া যায় না। অবশেষে ১৯৫০ সালে জোনাস সাল্ক পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন।
একুশে সংবা//জা.নি//র.ন
আপনার মতামত লিখুন :