টিফিনে বা ছুটির ঘণ্টা পড়লেই স্কুলের পাশের দোকানগুলোয় মন ছুটে যায়। সাধারণত ভ্রাম্যমাণ এসব দোকান। সেখানে ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুরি বা বাহারি আচার থরে থরে সাজানো। বাইরের খাবার খাওয়া ঠিক নয়- এমন সাবধানবাণী মা-বাবা বা অন্য অভিভাবক বরাবরই শোনান। তবে ফুচকাওয়ালার দুই চাকার ঠেলা স্টলটিতে ফুলে থাকা ঠাসা ফুচকাগুলো দেখলে মন কি মানে! তাই নিষেধের বাণী তখন মন থেকে হাওয়া।
তবে নিশ্চিন্তে যারা বাইরের এসব মুখরোচক খাবার গলাধঃকরণ করছে প্রতিদিন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল) নামের খাবারের মান পরীক্ষায় দেশের একমাত্র রেফারেন্স প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ঢাকা শহরের শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে কলেরার জীবাণু ই-কোলাই’র উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫টি ভেলপুরি ও ৩টি ঝালমুড়ির নমুনায় টাইফয়েডের জীবাণু সালমোলিনা পাওয়া গেছে। এছাড়া ৩০টি ফুচকার নমুনায় শতভাগ, ১২টি ভেরপুরির নমুনায় ৭৫ ভাগ, ঝালমুড়ি ১৩টি ও ৪টি আচারের নমুনায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় ঈস্ট পাওয়া গেছে যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এ খবর দিয়েছে পার্সটুডে।
গবেষণা বলছে, তারা ঢাকা শহরের ৪৬টি থানায় অবস্থিত স্কুলের সামনে থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুসকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করে। সংগৃহীত নমুনার মাইক্রোবায়লোজিক্যাল পরীক্ষার জন্য ঈস্ট ও মোল্ড, কলিফর্ম, সালমোনিলা, ই-কোলাই’র উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে ই-কোলাই’র উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এক বছর ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার ৪৬টি স্কুলের সামনে থেকে ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুরি ও আচারের নমুনা সংগ্রহ করে এনএফএসএলের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। এতে কৃত্রিম রং, ইস্ট, ই-কোলাই, কলিফর্ম, মাইকোটক্সিন, সালমোলিনার মতো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫৫টি নুডুলসের গুণগতমান পরীক্ষা করে দেখা গেছে ১৪টি নডুলসে নির্দিষ্টমাত্রার চেয়ে প্রোটিনের পরিমাণ কম আছে। লেডের পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম ও অনেকগুলোতে শূন্য মাত্রায় পাওয়া গেছে এবং বিভিন্ন মাত্রায় টেস্টিং সল্ট পাওয়া গেছে। আরো ৪৬৫টি খাবারের নমুনার গুণগত মান পরীক্ষা করে তাতে টেস্টিং সল্ট, পেস্টিসাইড, রং, আলফা টক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ২০১৬-১৭ সালে এই পরীক্ষা করা হয়।
এমন অবস্থায় কথা হয় বিভিন্ন দোকানীদের সাথে, তাদের দাবি তারা পুষ্টির বিষয়টি খেয়াল রেখেই নিরাপদভাবে ঢেকে খাবারগুলো তৈরি ও বিক্রি করেন। ক্রেতা বলছেন, ব্যস্ত নগরে খাবারের চাহিদা মেটাতে অনেক সময় গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছেন তারা। কিন্তু পুষ্টিমাণ কিংবা জীবানুর বিষয়টি থাকছে না তাদের বিবেচনায়।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টিবিদ তৃপ্তি চৌধুরী বলেছেন, খাদ্যমান বজায় না থাকলে আর এ ধরনের অপুষ্টিকর খাবার দীর্ঘমেয়াদে খেলে তার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :