শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই হবে না, বরং পরিমাণও ঠিক রাখা জরুরি। আপনি হয়তো নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন, বাইরের তেল-মশলা এড়িয়ে চলছেন, ভাজাভুজি কমিয়ে দিয়েছেন— তবুও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না! মাসের পর মাস স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েও যদি ওজন না কমে, তাহলে নিশ্চয়ই কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে।
পুষ্টিবিদ অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় বলেছেন," এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে নিজেকেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে হবে। কারণ, খাবার নিয়ন্ত্রণ করলেও অন্য কিছু কারণে ওজন কমতে দেরি হতে পারে"।
নিচের তিনটি প্রশ্ন আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে, কোথায় ভুল হচ্ছে।
১. মানসিক চাপ বেশি নিচ্ছেন কি?
শরীর ও মনের গভীর সংযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে থাকলে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পেটে মেদ জমার একটি প্রধান কারণ। পুষ্টিবিদের মতে, "এক-আধ দিনের মানসিক চাপ সমস্যা নয়, তবে যদি এটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে তা বিপাকক্রিয়া (metabolism) ধীর করে দেয় এবং ওজন কমতে বাধা দেয়।" তাই ওজন কমাতে চাইলে শুধু খাবারের দিকে নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর দিতে হবে।
২. কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন?
পুষ্টিবিদ অঞ্জলি বলেন, "ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে ক্যালোরিযুক্ত খাবার। ময়দার বদলে কাঠ বাদামের আটা, সাদা তেলের বদলে ঘি, বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, কিশমিশ, খেজুর— এগুলো স্বাস্থ্যকর হলেও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন কমার বদলে বরং বাড়বে!" তাই স্বাস্থ্যকর খাবারও হিসাব করে খাওয়া দরকার, যাতে শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা না হয়।
৩. থাইরয়েডের সমস্যা নেই তো?
হাইপোথাইরয়েডিজম ওজন না কমার অন্যতম কারণ হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এর ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে ওজন কমতে দেরি হয়। পুষ্টিবিদ বলেন, "অনেক সময় রক্তপরীক্ষায়ও হাইপোথাইরয়েডিজম ধরা পড়ে না।" তবে কিছু লক্ষণ দেখে অনুমান করা যেতে পারে:অতিরিক্ত ক্লান্তি,কোষ্ঠকাঠিন্য,চুল পড়া,ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া,পেশিতে ব্যথা,গলার স্বরের পরিবর্তন,অনিয়মিত ঋতুচক্র। যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো যা খেয়াল রাখতে হবে,এছাড়াও বিপাকক্রিয়ার (metabolism) স্বাস্থ্য ভালো আছে কি না, সেটাও দেখা জরুরি। হজমপ্রক্রিয়া ঠিকঠাক না হলে, পুষ্টিকর খাবারও ঠিকমতো কাজ করবে না। তাই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধু ডায়েট নয়, বরং সঠিক পরিমাণে খাওয়া, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হরমোনের ভারসাম্যও গুরুত্বপূর্ণ।
যদি এত কিছুর পরেও ওজন না কমে, তবে পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার ডায়েট ও লাইফস্টাইলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং আরও কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :