মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শনিবার (১ মার্চ) সকাল থেকে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেছেন। কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’।
তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, সিসিইউ ও আইসিইউ এই কর্মসূচির আওতামুক্ত রেখেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
শনিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা অবস্থান নেবেন বলেও জানিয়েছেন ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের’ সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুন নবী। সারাদেশে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
শুক্রবার ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাতের মুক্তির ৫ দফা আদায়ে সারাদেশে মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চললেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
“সুতরাং, ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস এই মর্মে আহ্বান করছে যে, মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের চলমান কর্মবিরতির সাথে একাত্মতা পোষণ করে সকল সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসকরা (বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন পাওয়া সব ডাক্তার) শনিবার হতে ৫ দফার যৌক্তিক উপসংহারে না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্যে কর্মবিরতি পালন করবেন।”
শনিবার সকালে মো. নুরুন নবী গণমাধ্যমকে বলেন, “হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং ইনডোরের কার্যক্রমে আমরা অংশ নিচ্ছি না। তবে জরুরি বিভাগ, আইসিইউ, সিসিইউ এই কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। বেলা ১১টায় আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেব।”
দশম গ্রেডে শূন্য পদে নিয়োগ, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরিসহ চার দফা দাবিতে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় বিক্ষোভ করেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টস ট্রেনিং স্কুল-ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। সরকারের আশ্বাসে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রয়েছে।
তাদের পাল্টায় সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না- এমন দফাসহ পাঁচ দাবিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিন কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যাননি।
আগের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ দফার দাবিতে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ করেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দাবি
• এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না। বিএমডিসির নিবন্ধন কেবল এমবিবিএস/বিডিএস উত্তীর্ণদের দেওয়া, ম্যাটসদের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করা এবং বিএমডিসির আইনের বিরুদ্ধে করা রিট মামলা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
• চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া আর কেউ ওটিসি তালিকার বাইরে ওষুধ লিখতে পারবে না।
• স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক সংকট নিরসনে দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদ পূরণ, চিকিৎসকদের বিসিএসে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
• সব ধরনের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এবং মানহীন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। এরইমধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদবি বাতিল করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
• চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
একুশে সংবাদ/ব.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :