AB Bank
ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত শিশুসহ ৩৫ কোটি মানুষ


Ekushey Sangbad
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৪:৫৯ পিএম, ১১ আগস্ট, ২০২৩
রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত শিশুসহ ৩৫ কোটি মানুষ

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখনো অনেক রহস্যজনক রোগ রয়েছে যার কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না চিকিৎসকরা। সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ এমন রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত। শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।


হেলেন সেডাররোথ ও মাইক দম্পতি এমনই একটি ভুক্তভোগী পরিবার। রোগের উপসর্গ শুরুর সময় থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তারা সন্তানদের নিয়ে অসংখ্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো সমাধান দিতে পারেননি। একে একে রহস্যজনক রোগে তাদের তিন সন্তানকে হারিয়েছেন।

 

১৯৮৩ সালে হেলেনের ছেলে উইলহেমের জন্ম হয়। তবে উইলহেমের বয়স এক বছর হতে না হতেই তার মৃগীরোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তিন বছর বয়সে তার ওপরের শ্বাসনালিতে প্রদাহ (ফলস ক্রুপ) হয়। তখন পরিবারকে জানানো হয়েছিল, উইলহেমের হাঁপানি আছে। মা হেলেন এ কথায় ভরসা পাননি। তিনি আরও বেশি কিছু জানতে চেয়েছিলেন। কেন এ রোগ হলো, আর নিরাময়ই-বা কী, তা জানতে চেয়েছিলেন তিনি। হেলেনের পরিবারে সেই প্রথম রহস্যজনক রোগের অভিজ্ঞতার শুরু হয়।

 

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫০ শতাংশ এই বিরল রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের পাঁচ বছর বয়সের আগে মৃত্যু হয়। শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ছয় হাজার শিশু ‘নামহীন রোগ’ (সোয়ানিস) বা অনির্ণেয় রোগ নিয়ে জন্ম নেয়।

 

লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের নামহীন রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্লিনিক্যাল নার্স বিশেষজ্ঞ অ্যানা জিউইট বলেন, কখনো কখনো অভিভাবকের উদ্বেগ সত্ত্বেও জানানো হয়, শিশু স্বাভাবিক আছে। তারপরও শিশুর রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না, এটা শোনা মা-বাবার জন্য সবচেয়ে খারাপ শব্দ।

 

মেরিল্যান্ডের বেথেসডায় ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর উইলিয়াম গাহল বলেছেন, সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসা অভিভাবকদের অধিকাংশই এমন আশ্বাস চান যে তার সন্তানের কিছুই হয়নি। তবে কিছু ক্ষেত্রে এ কৌশল বিপরীতমুখী হতে পারে। যেমনটি উইলহেমের সঙ্গে হয়েছিল। গাহল বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে অনির্ণেয় ও বিরল রোগ বংশগত হয়ে থাকে।

 

এরপর ১৯৯১ সালের ২৭ ডিসেম্বর হুগোর জন্ম হয়। মাত্র ছয় ঘণ্টা বয়সেই তার প্রথম খিঁচুনি আসে। পরে হেলেনের সন্দেহই সঠিক হয়—হুগোর মৃগীরোগ। এ কারণে জীবনের প্রথম ছয় মাস হুগোকে হাসপাতালে থাকতে হয়। হেলেনের পরিবার আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

 

হুগোর বয়স যখন ১৮ মাস, তখন হেলেনকে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, হুগো কখনো একা হাঁটতে বা বসতে পারবে না। কিন্তু যেদিন তারা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন, সেদিনই হুগো নিজে নিজে সোফায় উঠে গেছে। সে একেক করে আট ধাপ হেঁটে চিকিৎসকদের ভুল প্রমাণ করেছে। পরে হুগো শুধু হাঁটা নয়, দৌড়েও বেরিয়েছে।

 

১৯৯৪ সালের ১৪ জানুয়ারি হেলেন এমা নামের কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু জন্মের ৩০ মিনিটের মাথায় এমার খিঁচুনি শুরু হয়। তিন সন্তানের কেন একই রকম উপসর্গ তা জানতে হেলেন ও মিক লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল ও মেরিল্যান্ডে বাল্টিমোরের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকেরা এসব উপসর্গের কারণ উদ্‌ঘাটন করতে পারেননি। তারা শিশুদের এ অবস্থাকে ‘প্রকৃতির নির্মমতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

 

উইলহেম ১২ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার চাইল্ডহুড ডিমেনশিয়া শুরু হয়। সাইকেল চালানো ভুলে যায়। পড়াশোনা ভুলে যায়, এমনকি নিজের দাদিকেও একসময় চিনতে পারে না। সবকিছু থেকে সে পিছিয়ে যেতে থাকে।

 

পরে অস্ট্রিয়ায় দেশটির মেডিকেল নীতি কমিটির অনুমতি নিয়ে উইলহেমের চিকিৎসা শুরু হয়। তিন ভাইবোনের কোনো মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থাকতে পারে কি না, তা ১৯৯৭-৮৭ সালে একটি ফ্রাঙ্কো-সুইস দল গবেষণা শুরু করেন। হেলেন ও সন্তানদের ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করা হয়। কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি। গাহল বলেন, ১৯৯০-এর দশকে জিনোম সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি উইলহেমকে সাহায্য করার জন্য খুব সেকেলে ছিল।

 

১৫ বছর বয়সে স্পষ্ট হয়ে যায়, উইলহেম আর সুস্থ হবে না। তাকে বাড়িতে একটি নার্সিং দলের সহায়তায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়। ১৯৯৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কোনো সুস্পষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি।

 

উইলহেমকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন হেলেন ও মিক। এরই মধ্যে উইলহেমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার তিন সপ্তাহ পরই প্রথমবার কোমায় চলে যায় ছোট্ট এমা। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তাদের কিছুই করার নেই। পরে কোমা থেকে ফিরে এলেও ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর মাত্র ছয় বছর বয়সে বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। এর প্রায় দুই বছর পর ২০০২ সালের ৪ ডিসেম্বর ১১তম জন্মদিনের আগে হুগোরও মৃত্যু হয়। মৃগীরোগের পাশাপাশি তার ফুসফুসে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।

 

এই তিন শিশুর ঠিক কী হয়েছিল, তা নির্ণয় করা যায়নি। আবার এই তিন শিশুর নামহীন রোগের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা-ও জানা যায়নি। তারা যদি আরও কয়েক বছর পরে জন্ম নিত, তাহলে হয়তো তা জানা যেত। চলতি বছর যুক্তরাজ্যে গুরুতর বিকাশজনিত ব্যাধিসহ এমন হাজারো শিশুর একটি রোগ নির্ণয় করা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওই সব শিশুর মধ্যে ৬০টি নতুন রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে রোগনির্ণয়ের নেটওয়ার্ক সারা দেশে ১২টি গবেষণা দল ও ক্লিনিক্যাল কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম এমন রোগের রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে। ২০১৮ সালে এই কনসোর্টিয়াম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র দুই বছর পরেই ৩১টি নতুন উপসর্গ শনাক্ত ও ১৩২ জন রোগীর রোগ নির্ণয় করা হয়।

 

আর বর্তমানে এই কনসোর্টিয়াম ২ হাজার ২২০ জনের বেশি রোগীর মূল্যায়ন করেছে এবং সফলভাবে তাদের মধ্যে ৬৭৬ জনের রোগ নির্ণয় করেছে। এর মধ্যে ৫৩টি নতুন শর্ত বর্ণনা করেছে।

 

এদিকে প্রায় দুই বছর আগে হেলেন ও মিক একজন শীর্ষ ডায়াগনস্টিক জেনেটিসিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ওই চিকিৎসকের ধারণা, তাদের সন্তানদের সম্ভবত একটি নতুন রোগ হয়েছিল। সন্তানদের পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য জিনগত নমুনা জমা দিয়েছেন তারা। অন্যদের জীবন বাঁচাতে হয়তো এ পরীক্ষা কাজে দেবে।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!