পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপে স্বয়ং ভারতের কৃষকরাই বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এর ফলে পেঁয়াজের ভাণ্ডারখ্যাত মাহারাষ্ট্রে এশিয়ার সর্ববৃহৎ পেঁয়াজের পাইকারি বাজার লাসালগাঁওসহ প্রায় সব পাইকারি বাজার দু’দিন দরে বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, দেশটির কৃষক ও কৃষিপণ্যের পাইকারি বিক্রেতাদের সংগঠনগুলোর জোট এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটিজ-এর (এআইএমসি) ডাকে পেঁয়াজের বাজারে বন্ধের ডাক দেয় মহারাষ্ট্রের কৃষক ও কৃষিপণ্য বিক্রেতারা।
গত ১৯ আগস্ট শনিবার কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির শুল্ক ৪০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ সংক্রান্ত এক সরকারি প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর থাকবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুচরা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে এটিও একটি।
টানা ২ দিন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন পাইকারি বাজার বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ‘ঐতিহাসিক মূল্যে’ পেঁয়াজ কেনার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেন।
মন্ত্রী পীযুষ গয়াল বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজ ২ হাজার ৪১০ রুপিতে (৩ হাজার ১৭৮ টাকা) কিনে নেবে সরকার। গত বছর এই দর ছিল ১ হাজার ২০০ রুপি (১ হাজার ৫৮২ টাকা)।
তবে কৃষকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন কি না তা জানা যায়নি। ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের অধিকাংশ পাইকারি বাজারে কেনা-বেচা বন্ধ দেখা গেছে।
পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন, তারপরেই ভারতের অবস্থান। প্রতি বছর ২ কোটি ৪০ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয় দেশটিতে।
উৎপাদিত এই পেঁয়াজের অর্ধেকই আসে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলা থেকে। এ কারণে পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যটি ‘ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার’ হিসাবে
পরিচিত।
কৃষিজাত এই ফসলটির চাহিদাও ভারতে প্রচুর। সবজি এবং মসলা উভয় হিসেবেই এটি অপরিহার্য। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর মোট উৎপাদনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি করে ভারত।
তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার ছাড়া অধিকাংশ খাবারে পেঁয়াজ অপরিহার্য হলেও দেশটির পেঁয়াজের বাজার খুবই অস্থিতিশীল। কারণ, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই সবজি বা মসলাটি দ্রুত পচে যায় এবং হিমাগারে নিজেদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুবিধা দেশটির অধিকাংশ কৃষকের নেই।
ভারতে গ্রীষ্ম ও শীত দুই মৌসুমেই চাষ হয় পেঁয়াজ। গ্রীষ্মকাল, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে যে ফসল ওঠে, তা দিয়ে দেশটির মোট পেঁয়াজের চাহিদার ৬৫ শতাংশ মেটে।
কারণ, রপ্তানি শুল্ক আরোপের কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় সবই বিক্রি হবে অভ্যন্তরীণ বাজারে। বড় কৃষক ও আড়ৎদাররা হিমাগারে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলেও মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের অধিকাংশই সেই সুযোগ পান না।
একজন কৃষক বলেন, গত বছরও এই পরিস্থিতি হয়েছিল। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ রুপিতে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সুবিধা ভোগ করেছিল বড় কৃষকরা। অনেক ছোট কৃষককে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৮ থেকে ২০ রুপিতে বিক্রি করতে হয়েছে।
এখন রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোয় স্বাভাবিকভাবেই পেঁয়াজ রপ্তানি কমে যাবে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দামও পড়ে যাবে। আমাদের অনেকের মুনাফা তো দূর, চাষের খরচও হয়তো উঠবে না।
মঙ্গলবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল বলেন, একটি চক্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে গুজব ছড়াচ্ছে। কৃষকদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। চলতি মৌসুমে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ ২ হাজার ৪১০ রুপিতে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :