আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশটি ইয়েমেনে বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে সৌদি আরবের সাথে আলোচনার জন্য হুথি বিদ্রোহীদের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব গেছে। তবে রিয়াদ এবং ইরান-সমর্থিত হুথিদের মধ্যে এখন কী শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এদিকে, ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ`র সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মুহাম্মাদ আলী আল হুথি বলেছেন, সংঘাতের মূল প্রতিপক্ষ হচ্ছে সৌদি আরব এবং দেশটির সঙ্গে এখন আলোচনা চলছে। তিনি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা যে সমাধান সূত্রের কথা বলেছি তাতে আগ্রাসী জোটের সঙ্গে আলোচনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ আগ্রাসন ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধের বিষয়টি আগ্রাসী জোটের হাতে রয়েছে।’
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, ২০২১ সালের মার্চে রিয়াদের পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে তার ভিত্তিতে ইয়েমেনের একটি প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দিকে যাবে।
আনসারুল্লাহর নেতা মুহাম্মাদ আলী আল-হুথি বলেছেন, ‘তারা সৌদি আরবকে সংঘর্ষের একটি পক্ষ বলে মনে করেন এবং রিয়াদ কখনোই মধ্যস্থতাকারী নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে মানবিকতা, বিমান বন্দর ও নৌ বন্দরগুলো খুলে দেওয়া, ইয়েমেন থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার, কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা দুই দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।’
হুথিরা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে রেখেছে। তবে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব এবং ইরান, এই বছরের শুরুর দিকে চীনের মধ্যস্থতায় সম্পর্ক সহজ করার লক্ষ্যে আলোচনায় বসে। এর পর হুথিদের এই সফর শুরু হয়। এর আগে, এই ছদ্মযুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা অনুষ্ঠিত হয়।
ইয়েমেনের সংঘাত শুরু হয় ২০১৪ সালে। তখন হুথিরা সানা এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়। এরপর, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার দক্ষিণে পালিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবে নির্বাসিত হয়।
হুথিদের এই দখলের কয়েক মাস পর, সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট সেখানে হস্তক্ষেপ করে। আর, এই সংঘাত সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে একটি আঞ্চলিক ছদ্ম যুদ্ধে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দূর থেকে এই সংঘাতের বিষয়ে সৌদি আরবকে গোয়েন্দা সহায়তা প্রদান করে।
এই যুদ্ধে, বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধাসহ দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে; আর, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। গত অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া একটি যুদ্ধবিরতি অবশ্য তখন থেকে অনেকাংশে কার্যকর হয়। সৌদি আরব, তার স্থানীয় মিত্ররা এবং হুথিরা শান্তি আলোচনা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এপ্রিলে বন্দী বিনিময় করেছে।
সূত্র : রেডিও তেহরান
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :