ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে লেবাননেও। দক্ষিণ লেবানন থেকে শত শত মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানী ও অন্যান্য শহরে চলে যাচ্ছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। গত সাত দিন ধরে তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে সীমান্ত এলাকায়।
প্রতিবেশি দেশ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও এ যুদ্ধে যোগ দেয়নি। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরদিন থেকেই ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। বিনত জেবিল গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মারী বলেন, ‘আমাদের জীবন থেমে গেছে। জানি না কখন আবার পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সবাই খুব আতঙ্কিত অবস্থায় আছি। কখন যে কী হয়!’
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলি নিহত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৩০০ জন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসের পক্ষে হিজবুল্লাহ শিগগিরই যোগ দিতে পারে। এরই মধ্যে গত বুধবার ইসরায়েলের সামরিক অবস্থানে ট্যাঙ্ক-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে হিজবুল্লাহ। প্রতিক্রিয়া হিসেবে হিজবুল্লাহদের একটি ক্যাম্পে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত তিনজন বেসামরিক লেবাননি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে তিনজন হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন।
লেবাননের জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ইসরায়েলের ৮১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৬ লাখ মানুষ বাস করেন। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির পর থেকে দুই দেশ বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে। সর্বশেষ ২০০৬ সালের পর আপাত যুদ্ধবিরতি চললেও মাঝে মাঝে সংঘর্ষে জড়ায় তারা।
২০০৬ সালের যুদ্ধে ১ হাজার ১০৯ জন বেসামরিক লেবানিজ নিহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের ৪৩ জন বেসারিক ও ১২ জন সেনা নিহত হয়েছিল। ২০১২ সালের পর থেকে মূলত হিজবুল্লাহর শক্তি বেড়েছে। সেই সময়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে যোদ্ধা মোতায়েন করেছিল হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, তাঁর দলে এখন ১ লাখ যোদ্ধা রয়েছে। এই যোদ্ধারা যদি হামাসের পক্ষে যোগ দেয় তবে ইসরায়েলের বিপক্ষে যুদ্ধ তীব্র রূপ নেবে।
২০০৬ সালের যুদ্ধের স্মৃতি এখনও অনেক বাসিন্দার মনে দগদগে ক্ষত হয়ে আছে। তাই তারা লেবাননের দক্ষিণের শহর ও গ্রামগুলো থেকে রাজধানী বৈরুত ও আশপাশের শহরতলিতে চলে যাচ্ছে। আন্না নামের একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমি ২০০৬ সালের বিভৎসতা দেখেছি। তাই এখানে আর থাকতে চাই না। আমি আমার সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে চাই।’
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :