গাজায় আকাশপথে হামলা আগেই শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। এবার সমুদ্র এবং স্থলপথেও হামলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। গাজা সীমান্তে ইতিমধ্যেই ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। জড়ো করা হচ্ছে ট্যাঙ্কবাহিনীকেও। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দু’দিন আগেই গাজ়ার বাসিন্দাদের সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন দ্রুত উত্তর প্রান্ত ছেড়ে যেন চলে যায় তারা।
নেতানিয়াহু একই সঙ্গে হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা ছাড়লে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। গাজার উত্তর প্রান্তে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের বাস। ইসরায়েলের সেই হুঁশিয়ারি পাওয়ার পরই তারা দলে দলে পালাতে শুরু করেছেন। কিন্তু গাজা এখনও হামাসের কব্জায়। আর সেখান থেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
একদিকে, বিমান হামলা চালিয়ে হামাসের কোমর ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল। অন্যদিকে, গাজয় ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের খুঁজে বের করে হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। কিন্তু ইসরায়েল স্থলপথে হামলার কথা বললেও তাদের সামনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। তাদের মতে, হামাসের তুলনায় ইসরায়েলি সেনার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে হামাসের বানানো সুড়ঙ্গের ‘জাল’।
প্রসঙ্গত, গোটা গাজা ছড়িয়ে রয়েছে সুড়ঙ্গ। যে সুড়ঙ্গপথগুলিকে ভিয়েতনামের সুড়ঙ্গপথের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েও ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি আমেরিকা। কারণ আমেরিকার সেনা এই সুড়ঙ্গপথ পার করে ঢুকতে পারেনি। হামাসও সে রকমই গোটা গাজায় সুড়ঙ্গের জাল বিছিয়ে রেখেছে। যা ইসরায়েলি সেনার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
২০২১ সালে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করেছিল, ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গপথ ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। কিন্তু হামাস নেতা ইয়াহা সিনবার পরবর্তী কালে দাবি করেন, গাজ়ায় ৫০০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গপথ রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি রিপোর্টের দাবি, এই সুড়ঙ্গ গোলকধাঁধার মতো। কোথায় শুরু, কোথায় শেষ তার হদিস পাওয়া মুশকিল।
বেশ কয়েকটি রিপোর্টে এমনও দাবি করা হয়েছে, কোথাও কোথাও সুড়ঙ্গপথ শুরু হয়েছে গাজার বাসিন্দাদের ঘর থেকে। সেই সুড়ঙ্গ নাকি সীমান্ত পেরিয়ে এক দিকে মিশর এবং অন্য দিকে ইসরায়েল পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এই কারণেই ইসরায়েলি সেনা হামাসের এই সুড়ঙ্গ জালকে ‘গাজা মেট্রো’ও বলে থাকে। এই সুড়ঙ্গকে নিরাপদ আশ্রয় এবং অস্ত্র মজুতের ঠিকানা হিসাবেও ব্যবহার করে হামাস যোদ্ধারা।
গত ৭ অক্টোবর রকেট হামলার পাশাপাশি গাজা সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের শহরে হামলা চালাতে এই সুড়ঙ্গপথকে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি ইসরায়েলি সেনাদের। গাজা সীমান্ত দিয়ে বাইরের কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য অত্যাধুনিক সেন্সর লাগিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। কিন্তু সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে ইসরায়েলের মাটিতে হামাস যোদ্ধারা ঢোকার কারণে সেই সেন্সর কারো গতিবিধি ধরতে পারেনি বলেই মনে করা হচ্ছে।
রিচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফনে রিচমন্ড বরাক বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “হামাসের বানানো সুড়ঙ্গে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে। হামলা থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওই সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেয় তারা। সুড়ঙ্গগুলিতে ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সেন্টার রয়েছে। বেশির ভাগ সুড়ঙ্গ ১ মিটার চওড়া এবং আড়াই মিটার উঁচু।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :