হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষে আমেরিকা ইসরায়েলকে দ্বিধাহীনভাবে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি সামরিক সহায়তা দিয়ে সমর্থন করেছে। কিন্তু এই অঞ্চলে অতীতের জটিল ক্ষতগুলো এখনো বাস্তব।
বিবিসির প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা জোনাথন বিয়ালে এক প্রতিবেদনে লিখছেন, ইসরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন স্পষ্ট করেছেন, ‘আমেরিকা ইসরায়েলের সাথে আছে।’ তিনি বলেন, ‘যে কেউ পরিস্থিতির সুবিধা নেওয়ার কথা ভাবছে, আমার একটি শব্দ আছে: করবেন না।’ স্পষ্টতই তার এই সতর্কতার লক্ষ্যই ছিল ইরান ও তার মিত্ররা।
পেন্টাগন নিজেই বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের বেশ কয়েকবার আক্রমণ করা হয়েছে। লোহিত সাগরে একটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকে দিয়েছে। এটা ইসরায়েলের দিকে তাক করে ছোড়া হয়েছিল।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইতিমধ্যেই আমেরিকার একটি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ রয়েছে। শিগগির এই অঞ্চলে অন্য একটি দল যোগ দেবে। প্রতিটি বিমানবাহী রণতরীতে ৭০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান রয়েছে। আছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ। বাইডেন প্রয়োজনে এই অঞ্চলে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার মার্কিন সেনাকে প্রস্তুত রেখেছেন।
আমেরিকা ইসরায়েলের বৃহত্তম সামরিক সহায়তাকারী দেশ। বছরে প্রায় ৩৮০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সহায়তা দেয়। গাজায় বোমা বর্ষণকারী ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো আমেরিকার তৈরি দূর নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করছে। ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের জন্য কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকায় তৈরি হয়।
জোনাথন লিখছেন আরো লিখছেন, ইসরায়েল অনুরোধ করার আগেই আমেরিকা সেই অস্ত্রগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতিমধ্যে ইসরায়েলের জন্য ১৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসকে বলেছেন। তবে ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য বাইডেনের মোট প্যাকেজ সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলার। বলার অপেক্ষা রাখে না এর বড় অংশই এখন ইসরায়েল পাবে।
এরপরও এই প্রশ্ন ঘুরে–ফিরে আসছে যে, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি সত্যিই অন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে ইচ্ছুক হবেন, বিশেষ করে নির্বাচনের বছরে? এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক মার্কিন সামরিক অভিযানগুলো ব্যয়বহুল বলেই প্রমাণিত হয়েছে। আর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মার্কিনিদের জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে এর চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।
আমেরিকা ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন বিশ্বাস করেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়ে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলছেন, এই ধরনের অস্ত্র আপনি তখনই বের করবেন, যখন এটা ব্যবহারের ইচ্ছা আপনার আছে।
তবে ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা–বিষয়ক পরিচালক সেথ জি জোনস বলছেন, গাজায় যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হতে যুক্তরাষ্ট্র খুবই অনিচ্ছুক। ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপের উপস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘একটি গুলি চালানো’ ছাড়াও এটা হতে পারে। বিশেষ করে এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং আকাশ– নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের উত্তর থেকে এবং জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে এটা কার্যকর। হিজবুল্লাহকে নিয়ে এখন ইসরায়েল ও আমেরিকা উভয়েই উদ্বিগ্ন। ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি হামাসের চেয়ে অনেক বড় হুমকি। এদের কাছে প্রায় দেড় লাখ রকেট আছে। এগুলো হামাসের ব্যবহৃত রকেটের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সঠিক স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। হিজবুল্লাহর সাথে ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের গোলা বিনিময় হয়েছে।
মাইকেল ওরেনের আশঙ্কা, ইসরায়েল যখন গাজার গভীরে ঢুকে পড়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন হিজবুল্লাহ হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদি তা ঘটে, তাহলে আমেরিকা তার বিশাল বিমান শক্তি নিয়ে লেবাননের ভেতরে হিজবুল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন–উভয়েই দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, পরিস্থিতি আরও জটিল হলে এবং কোনো মার্কিন কর্মী বা সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করলে আমেরিকা প্রতিক্রিয়া জানাবে।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :