রিপাবলিকান দলের কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরা ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপের সমর্থন লাভের জন্য ইরান বিরোধী ব্যাপক প্রচারণায় নেমেছেন। বিশেষ করে আবারো তারা ইরানের বিরুদ্ধে হামলার বিষয়টি উত্থাপন করেছে।
এ প্রসঙ্গে, দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের সামরিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন, আনসারুল্লাহ ইরান থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে এবং সে কারণে ইরানকে "বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা উচিত"। তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে ইরানের ব্যাপারে `দুর্বলতা` না দেখাতে এবং আমেরিকার জন্য "রেড লাইন" কী হবে তা ইরানকে জানাতে পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে, আমেরিকার ডানপন্থী রাজনীতিবিদ জন বোল্টন তার ইরান বিরোধী কথাবার্তাকে আরও জোরদার করেছেন। ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক নিবন্ধে, বোল্টন লিখেছেন, তার ভাষায় ইরান যদি পরিস্থিতিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয় তাহলে এর জন্য তাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হবে। সহিংসতা ও যুদ্ধবাজ এই মার্কিন রাজনীতিবিদ আরো বলেছেন, `লোহিত সাগরে আমেরিকাসহ অন্য বাণিজ্যিক জাহাজের উপর ইয়েমেনের হামলা বিশ্ব বাণিজ্য এবং সুয়েজ খালের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে`।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী নিকি হ্যালি যিনি এর আগে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তিনি গত নভেম্বর মাসে একটি নির্বাচনী বিতর্কে জো বাইডেন সরকারের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, শক্তিশালী অবস্থানে থেকে ইরানের সাথে কথা বলা উচিত।
ধারনা করা হচ্ছে, মার্কিন কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত কথাবার্তা বলার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইসরাইলের বিরুদ্ধ গাজার ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযানের পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সাথে দীর্ঘ তিন মাস ধরে ইসরাইল সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তারা ইরানকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করেছে যাতে বাইডেন সরকার ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। তবে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বেশ কয়েকবার বলেছেন যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের অভিযানে ইরানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ ওয়াশিংটনের কাছে নেই।
ইসরাইলের প্রতি অন্ধ অনুগত মার্কিন কিছু কর্মকর্তার মতো ইসরাইলের কর্মকর্তারাও লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনিদের হামলার সাথে ইরান জড়িত বলে দাবি করেছেন। কিন্তু, এই দাবির স্বপক্ষে যদি ওয়াশিংটনের কাছে কোনো প্রমাণ থাকত, তাহলে নি:সন্দেহে মার্কিন কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা যুদ্ধ শুরু করে দিত।
মার্কিন কর্মকর্তাদের ইরান বিরোধী বক্তব্যের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা মার্কিন ইহুদি ও ইসরাইলি লবিং গ্রুপের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছে।
তবে, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন রাজনীতিবিদদের কঠোর বক্তব্যে দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী বিবেক রামাস্বামী `বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইরানকে মুছে দেয়ার` হুমকি দিয়ে লিন্ডসে গ্রাহামের সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্স পেজে দেয়া মন্তব্যে লিখেছেন, এখন আমাদের কাছে লিন্ডসে গ্রাহাম এবং নিকি হ্যালির মতো লোক রয়েছে যারা মানচিত্র থেকে ইরানকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, এটি সত্যিই ঘৃণ্য কাজ।
তবে, ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসব হুমকির বিরুদ্ধে সবসময়ই কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যেকোনো আগ্রাসনকে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে বলে ইরানের কর্মকর্তারা পাল্টা হুমকি দিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :