অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেই একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, যেভাবে মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, ঠিক সেভাবেই অসহায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের হত্যা করছে ইসরাইলি সেনারা। আর গাজায় ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধরত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি বিষয়টি নথিভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরা’র।
উত্তর গাজার হামাদ স্কুলের কাছে মাটিচাপা ‘প্লাস্টিকের ব্যাগে’ চোখ বাঁধা ও হাতকড়া পরানো ফিলিস্তিনি বন্দিদের অন্তত ৩০টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে মৃতদেহগুলোতে পচন ধরেছে।
বুধবার এ ঘটনাকে ইসরাইলি ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ‘গণহত্যার সত্যতা ও আমাদের জনগণ কী ধরনের ভীতিকর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক তদন্ত দলকে গাজা পরিদর্শনের আহ্বান’ জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, ব্যাগে ভরার আগে বন্দিদের চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। তারপর তাদের হত্যা করা হয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, স্কুল পরিষ্কার করতে এসে স্কুল প্রাঙ্গণে ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই উঁচু ঢিবি দেখতে পান তারা। তিনি বলেন, ‘ওই ঢিবিটার খানিকটা মাটি সরাতেই প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো নজরে আসে। ব্যাগ খুলতেই চোখ আর হাত-পা বাঁধা পচা লাশ পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে তাদের হাত-পা বাঁধা হয়েছিল। আর চোখ-মাথা ঢাকা ছিল কাপড় দিয়ে।’
মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে গণকবরের ‘নথি’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস। টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে একে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলেছে ফিলিস্তিনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহর থেকে আল-জাজিরার এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মৃতদেহগুলো গুরুতরভাবে পচে ও গলে গেছে। আর কিছুদিন পরই হয়ত সেগুলো কঙ্কালে পরিণত হতো। তাদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কিন্তু তারপরও হারিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের স্বজনরা আসছেন লাশের স্তূপের মধ্য থেকে তাদের আত্মীয়কে খুঁজতে।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার আইনজীবী ডায়ানা বাট্টু বৃহস্পতিবার আল-জাজিরাকে বলেছেন, গণকবরের সন্ধান পাওয়া ‘স্পষ্টই একটি যুদ্ধাপরাধ’। এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গত মাসে, জাতিসংঘের এক মানবাধিকার কর্মকর্তা ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে ইসরাইলের দুর্ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি এমন কিছু লোকের সঙ্গে দেখা করেছেন যাদেরকে ইসরাইলের সেনারা কয়েক সপ্তাহ আটক রেখেছিল। তাদেরকে চোখ বেঁধে মারধর করা হয়েছিল।
জাতিসংঘের ওই মানবাধিকার কর্মী অজিথ সুঙ্গায় গাজা থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, এরা সেই লোক যাদেরকে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ৩০ থেকে ৫৫ দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছিল। সীমান্তে এদেরকেই চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কিছু পুরুষ বন্দিকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ঠাণ্ডায় তাদের সব পোশাক খুলে নিয়ে শুধু ডায়াপার পরানো হয়। কেন তাদেরকে ডায়াপার পরানো হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই অবস্থায় তাদেরকে দেখাটাও ছিলো ভীষণ ভীতিকর।
যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলি সেনাবাহিনীও বেশ কিছু ভিডিও শেয়ার করেছিল। সেগুলোতেও শত শত ফিলিস্তিনি পুরুষদের অন্তর্বাস খুলে ঠাণ্ডায় বসে থাকতে দেখা গেছে। কখনও কখনও তাদের চোখ বাঁধা ছিল। কয়েকটি ভিডিওতে নারী ও শিশুদেরও দেখা গেছে।
গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৭ হাজার ছুঁই ছুঁইগাজায় নিহতের সংখ্যা ২৭ হাজার ছুঁই ছুঁই
চার মাস ধরে চলা ইসরাইলি বোমাবর্ষণ আর স্থল আক্রমণের পর ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকাই ধ্বংস হয়ে গেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :