ভারতজুড়ে ‘গ্রামীণ ভারত বন্ধ’ ধর্মঘট পালন করেছেন দেশটির আন্দোলনরত কৃষকরা। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশজুড়ে চাষাবাদ ও কৃষি সংক্রান্ত সব ধরণের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার কর্মসূচী পালন করা হয়। সেই সঙ্গে ‘চাক্কা জ্যাম’ নামে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
দীর্ঘ তিন বছর পর আবারও কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। ট্র্যাক্টর আর ট্রাক নিয়ে হাজার হাজার কৃষক রাজধানী নয়াদিল্লি অভিমুখে এগিয়ে চলেছেন। এদিকে রাজধানীতে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে শত শত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন মতে, এই মুহূর্তে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের সীমান্ত বরাবর অবস্থান করছেন কৃষকরা। ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সেখানকার পরিস্থিতি। এরই মধ্যে দফায় দফায় পুলিশ ও কৃষকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কৃষকদের ওপর মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। টিয়ার গ্যাস ছুড়তে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষকরাও ইট-পাটকেল ছুড়ে পুলিশকে হটানোর চেষ্টা করছে।
এখন থেকে তিন বছর আগে ২০২১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি সংক্রান্ত তিনটি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন দেশটির কৃষকরা। কয়েক মাস ধরে বিস্তৃত পরিসরে তীব্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
সে সময়ে অনেক কৃষকের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে। এবার সেইসব মামলা প্রত্যাহার, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা এবং সব কৃষি ঋণ মওকুফের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা।
ভারতীয় কৃষক সংগঠনগুলোর ডাকা দেশব্যাপী আন্দোলন শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চারদিনে প্রবেশ করেছে। গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ‘দিল্লি চলো’ নামে মিছিল নিয়ে রাজধানী দিল্লি অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন কৃষকরা।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পদযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কৃষক নেতারা। এরপর বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে দিল্লি অভিমুখে পদযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
‘দিল্লি চলো’র পদযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রবার ‘গ্রামীণ ভারত বন্ধ’র ডাক দেন কৃষক নেতারা। ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেশজুড়ে কৃষকদের চাষাবাদ ও কৃষি সংক্রান্ত সব ধরণের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে এবং সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বলা হয়।
যার ফলে পরিবহন ও কৃষির মতো কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরে দুধ ও শাক-সবজির সরবরাহও হ্রাস পেয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লির দিকে আসার জাতীয় মহাসড়কে কংক্রিট আর পেরেক পুঁতে এবং কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়ে বহু স্তরীয় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ।
একাধিক স্তরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে রাজধানী দিল্লিতে আগামী একমাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে।
ট্রাক্টর আর লাঠিসোঁটা দিয়ে ওইসব ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। এমন ভিডিও প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থাগুলো। খবরে বলা হয়েছে, হরিয়ানা থেকে দিল্লির রাস্তায় ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। এরপর পুলিশ ও কৃষকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় যা থেমে থেমে চলতে থাকে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন মতে, শুক্রবারও পুলিশকে কৃষকদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে দেখা গেছে। পাল্টা ইটব-পাটকেল ছুঁড়ছেন কৃষকরা। এদিকে কৃষক আন্দোলনের ফলে দিল্লির কাছেই গাজিপুর সীমান্তে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :