ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় হামাসের কাছে জিম্মি ৭ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে জিম্মি নিহতের সংখ্যা ৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ নিহত ৭ জনের মধ্যে ৪ জন ইসরায়েলি এবং ৩ জন বিদেশি নাগরিক বলে জানা গেছে। তবে কখন, কোথায় এই ৭ জিম্মি নিহত হয়েছেন, তা পরিষ্কার করেননি এই প্রতিরোধ যোদ্ধা।
শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে এ তথ্য দিয়েছে হামাসের সামরিক বিভাগ আল কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, টেলিগ্রাম পোস্টে আবু উবাইদা বলেছেন, গাজায় গত প্রায় ৫ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় বেশ কয়েকজন জিম্মি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার নিহতের মধ্যে দিয়ে সেই সংখ্যা ৭০ জন ছাড়িয়েছে।
হামাস এই সাতজনের মধ্যে তিনজনের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হলো চাইম গারশন পেরি (৭৯), ইয়োরাম ইতাক মেতগার (৮০), আমিরাম ইসরায়েল কুপার (৮৫)। তবে বাকি চারজনের নাম প্রকাশ করেনি হামাস।
হামাস জানায়, আমরা আগেই ঘোষণা করেছিলাম যে ওইসব জিম্মিদের পাহারার দায়িত্বে থাকা আমাদের যোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমরা ধারণা করেছিলাম, ইহুদিবাদীদের হামলায় তারা এবং তাদের সাথে থাকা বন্দীরাও নিহত হয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আর তা হয়েছে ইহুদিবাদীদের বোমা হামলায়।
হামাসের বক্তব্য, আমরা বন্দীদের জীবন রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে পরিষ্কার যে ইসরাইলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে তাদের বন্দীদের হত্যা করছে। আর ইসরাইলি নেতৃত্ব তা করছে, এদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি, এসব নিহত বন্দীদের মূল্য জীবিতদের সমান। তাদের লাশ নিতে হলে যথাযথ মূল্য দিতেই হবে। আমরা আশা করি, ইসরাইল তাদের লোকদের আর হত্যা করবে না।
এদিকে, বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, হামাসকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবের মধ্যে আছে, ৪০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি হবে। হামাস যদি একজন বন্দিকে মুক্তি দেয়, তাহলে ইসরায়েল ১০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। তাছাড়া বলা হয়েছে, গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল ও বেকারি মেরামত করে দেয়া হবে। দরকার হলে আবার নির্মাণ করে দেয়া হবে। প্রতিদিন সেখানে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পাঁচশটি ট্রাক ঢুকবে।
কাতারের বক্তব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাইডেনের মন্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি কাতার। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, এখনো পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ও বন্দিদের মুক্তি দেয়া নিয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি।
তিনি জানিয়েছেন, মতৈক্যের জন্য কাতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্যারিসে একটা খসড়া চুক্তি তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল ও হামাস যাতে এই চুক্তি মেনে নেয়, তার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কবে যুদ্ধবিরতি হবে, তা নিয়ে কোনোরকম জল্পনা করতে কাতার রাজি নয়। তবে কাতার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদী।
দুর্ভিক্ষের মুখে গাজা ভূখণ্ডের চারভাগের মধ্যে একভাগ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে আছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে আছেন। দুই বছরের নিচে ছয়জন বাচ্চার মধ্যে একজন সেখানে ভয়ংকর অপুষ্টিতে ভুগছে। বস্তুত এই ভূখণ্ডের ২৩ লাখ মানুষ উপযুক্ত পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন না। যদি যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম দ্রুত সেখানে গিয়ে মানুষের হাতে খাবার তুলে দেয়ার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে। তবে বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ অনিবার্য বলে জাতিসংঘের মত।
উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৬ জন নিহত এবং ১৩১ জন আহত হয়েছে। এতে যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৬৯২ জনে। পাশাপাশি এ সময়ে আহত হয়েছে আরো ৬৯ হাজার ৮৭৯ জন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :