পুলিশের তালিকায় তিনি ছিলেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী। এতদিন ভিন্ন নামে আত্মগোপনে ছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেই খোন্দকার তানভীর ইসলাম জয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে কুয়ালালামপুরের একটি বদ্ধ ফ্ল্যাট থেকে। ১২ এপ্রিল একটি অ্যাপার্টমেন্টের দরজার তালা ভেঙে পুডু থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেখানেই দাফন করা হয়েছে জয়কে। এতদিন তারেক রানা নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন তিনি।
জয় অনেক দিন ধরে কুয়ালালামপুরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একা বসবাস করছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি কিডনী রোগে আক্রান্ত হন। তাকে ডায়ালাইসিস করাতে হতো নিয়মিত। ওই অ্যাপার্টমেন্টে একজন গৃহকর্মী দুদিন পরপর এসে রান্না ও ঘর পরিষ্কার করে চলে যেতেন।
১২ এপ্রিল সকালে ওই গৃহকর্মী অ্যাপার্টমেন্টে এসে কলিংবেল বাজানোর পরও কোনো সাড়া না পেলে বিষয়টি নিরাপত্তাকর্মীদের জানান। তারাও ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দরজা ভেঙে জয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।
হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, জয়ের বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কুয়ালালামপুরে এসে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসে ভাইয়ের মরদেহ নেয়ার জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে দূতাবাস তাকে এনওসি দেয়। সেটা হাসপাতালে জমা দিয়ে তিনি মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দাফন করেন।
নব্বই দশকের ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ লিয়াকত–হান্নানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আলোচিত হন তানভীর ইসলাম জয়। কলাবাগানের ধনাঢ্য পরিবারের এই সন্তান সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের সঙ্গে মিলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সে সময় তাদের গ্রুপটি পুলিশের কাছে সেভেন স্টার নামে পরিচিতি পায়। জয়ের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাকাণ্ড, দুটি হত্যাচেষ্টা, ভয়ংকর অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক জখম এবং চাঁদার জন্য শারীরিক ক্ষতির হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা ছিল।
২০০০ সালে জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় তারেক রানা নামে পাসপোর্ট করে ২০০১ সালে মালয়েশিয়া চলে যান। আবার ভারতে ফিরে আসেন। ভারতে থাকার সময় তার নামসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর পোস্টার প্রকাশ করে পুলিশ।
২০০৫ সালে বাংলাদেশের অনুরোধে ইন্টারপোল ‘রেড কর্নার নোটিশ’ জারি করে জয়ের বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমেদ খুনের ঘটনায় তার নাম আসে। ২০০৭ সালে রাজধানীর গড গিফট ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিতে গোলাগুলির ঘটনায়ও তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
২০০৭ সালে ভারতে অবস্থানের সময় সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। সেখানে কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে চলে যান কানাডায়। পরে সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর তিনি মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন।
জয় দুই বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী তার আপন মামি। সেই ঘরে একটি সন্তান আছে। তার বিদেশি দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেও একটি সন্তান রয়েছে।
একুশে সংবাদ/য.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :