ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। জবাবে ইসরায়েলও প্রতিশোধ নেওয়ার উপায় খুঁজছে, সাজাচ্ছে নানা পরিকল্পনা। হামলার পর এখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই সমগ্র বিশ্বের নজর। এই হামলার মাধ্যমে যেন আবারও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। হামলার পর ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জর্ডান, চীন, রাশিয়া থেকে শুরু করে তুরস্কের নানামুখী তৎপরতা ও বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
মূলত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলের হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হলে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধের আগুন। এর প্রতিশোধে শনিবার মধ্যরাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
ভৌগোলিক অবস্থানে ইরান
ইরানের আয়তন ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ কিলোমিটার এবং ইসরায়েলের আয়তন ২১ হাজার ৯৩৭ বর্গকিলোমিটার। ইরানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইরাক, তুরস্ক, আরমেনিয়া, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের।
ভৌগোলিক অবস্থানে ইসরায়েল
ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিসর, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননের। বিশ্বে ১০৮তম অবস্থানে থাকা ইরানের অন্য দেশের সঙ্গে সীমানার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৯৪ কিলোমিটার। ইসরায়েলের আছে ১ হাজার ৬৮ কিলোমিটার।
সেনা সদস্য
ইরানের সেনাবাহিনী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসে মোট ৬ লাখ ১০ হাজার নিয়মিত এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা রয়েছে। ইসরায়েলের নিয়মিত সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। দেশটিতে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাদের রিজার্ভ সেনার সংখ্যাও বেশি।
আকাশ প্রতিরক্ষা
ইরানের মোট যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৫১টি, যা ইসরায়েলের চেয়ে ৬১টি কম। ২৪১টি জঙ্গি বিমান নিয়ে বিশ্বে দশম অবস্থানে আছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ১৮৭টি জঙ্গি বিমান নিয়ে ইরানের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম।
বিমান হামলা বা ডেডিকেটেড অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম। অন্যদিকে ইরানের অবস্থান ৩১তম। সামরিক পরিবহনের জন্য ইসরায়েলের আছে ১২টি উড়োজাহাজ। অন্যদিকে ইরানের আছে ৮৬টি।
ইসরায়েলের কাছে প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ১৫৫টি, বিপরীতে ইরানের আছে ১০২টি। স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফটের দিক দিয়ে বিশ্বে ইসরায়েলের অবস্থান ১৫কম, অন্যদিকে ইরানের অবস্থান ২৫তম। ইসরায়েলের হেলিকপ্টার ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা যথাক্রমে ১৪৬টি ও ৪৮টি। অন্যদিকে ইরানের আছে যথাক্রমে ১২৯ ও ১৩টি।
ইরানের প্রাকৃতিক সম্পদ
ইরান প্রতিদিন উত্তোলন করে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল। প্রুভেন অয়েল রিজার্ভের ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। তাদের প্রুভেন রিজার্ভ ২১ হাজার কোটি ব্যারেল। আর ইসরায়েল ১ কোটি ২৭ লাখ ব্যারেল প্রুভেন রিজার্ভ নিয়ে বিশ্বে ৭১তম অবস্থানে আছে।
ইসরায়েলের প্রাকৃতিক সম্পদ
ইসরায়েলের কোনো কয়লা খনি নেই। ইরান কয়লা উত্তোলনের দিক থেকে বিশ্বে ৪৩তম। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে বিশ্বে ইরানের অবস্থান তৃতীয়, যেখানে ইসরায়েলের অবস্থান ৪০তম।
ইসরায়েলের বাজি আয়রন ডোমে
ইসরায়েল বরাবরই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে চমক দেখিয়ে এসেছে। দেশটির রয়েছে কয়েক স্তরের আধুনিক আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত আয়রন ডোম। ইসরায়েলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমের তৈরি এটি। এটি নির্মাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে বলে জানা যায়। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বিপরীতে আয়রন ডোম কম উচ্চতায় থাকা ওয়ারহেড রকেট আটকানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়রন ডোম হলো অ্যান্টি-রকেট, অ্যান্টি-মর্টার এবং অ্যান্টি আর্টিলারি সিস্টেম। এটা ২.৫ থেকে ৪৩ মাইল বা ৪ থেকে ৭০ কিমি দূর থেকে রকেট বা মিসাইল আটকে দিতে পারে। তারপর কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারে রকেটের পথ সম্পর্কে তথ্য পাঠায়। আয়রন ডোম হলো ব্যাটারির সিরিজ যা রাডারের মাধ্যমে শর্ট-রেঞ্জের রকেট শনাক্ত করে আটকে দেয়। প্রতিটি ব্যাটারিতে তিনটি বা চারটি লঞ্চার, ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি রাডার থাকে।
২০২১ সাল পর্যন্ত ইজরায়েলের অন্তত দশটি আয়রন ডোম ব্যাটারি দেশজুড়ে মোতায়েন রয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিটি ব্যাটারি ৬০ বর্গমাইল জনবহুল এলাকাকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আয়রন ডোম তার রেঞ্জের মধ্যে আসা রকেটকে প্রথমে শনাক্ত করে, তারপর তার পথ সম্পর্কে তথ্য পাঠায় কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারে। সেখানে দেখা হয় রকেটটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানবে কি না। যদি তাই হয় তখন আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রকেটটিকে ধ্বংস করে। আর যদি দেখা যায় রকেট খোলা অঞ্চলে বা সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে তাহলে ছেড়ে দেওয়া হয়। তেল আবিবের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ অনুসারে, প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য আনুমানিক ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার খরচ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আয়রন ডোমে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এর কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০১১ সালে এগুলো প্রথম মোতায়েন করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল প্রথমবার আয়রন ডোমকে সচল করে।
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে লুকোচুরি
সামরিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তি ইসরায়েলকে এগিয়ে রেখেছে। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল তার পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার শক্তিশালী করেছে। যদিও দেশটি সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বা কত সংখ্যক রয়েছে- বিষয়টি স্বীকার করে না। তবে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এমন দেশের তালিকায় ইসরায়েলকে গণ্য করা হয়। ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের সংগঠন ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের অনুমান, ইসরায়েলের হাতে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। অন্যদিকে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর। অনেকেই ধারণা করেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে ইরান সব সময়ই দাবি করে আসছে, তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত ইরান এবং ইসরায়েল-কোনো দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ভয়ংকর গোয়েন্দা দল ইসরায়েলের
ইসরায়েলের মোসাদকে বিশ্বের অন্যতম দক্ষ গোয়েন্দা বাহিনী ধরা হয়। বিশ্বজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ইসরায়েল বিভিন্ন সময় সফল গুপ্তচরবৃত্তি ও হামলার ইতিহাস রয়েছে মোসাদের। প্রতিশোধ, প্রতিরোধ সবক্ষেত্রেই বাহিনী এগিয়ে। ইরানকে ঠেকাতে গত দুই দশকে ইরানের সাত পরমাণু বিজ্ঞানীকেও গুপ্তহত্যা করেছে। এই সাতজন পরমাণু বিজ্ঞানী ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তহত্যার শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের পেছনে রয়েছে কখনো গাড়িবোমা অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রিমোট কন্ট্রোল পরিচালিত মেশিনগানের নির্ভুল নিশানা। বিশ্লেষকরা দাবি করেন, ফিল্মি কায়দায় গুপ্তহত্যায় বিষাক্ত গ্যাস কিংবা ম্যাগনেটাইজ বোমার মতো ভয়ংকর বিস্ফোরক ব্যবহার করে মোসাদ। মোসাদ কর্তৃক ইরানি বিজ্ঞানী হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে। ইরানের সবচেয়ে মেধাবী ও চৌকস পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদেহকে তেহরানের জনবহুল রাস্তায় রিমোট কন্ট্রোল মেশিনগান দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ইরানে মোসাদ সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ও দুঃসাহসিক ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ২০১৮’র জানুয়ারিতে। সেদিন ইরানের রাজধানীর প্রায় ৩২ কিমি দূরের একটি গোপন গুদাম থেকে পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক আট টন গোপন দলিল চুরি করে তেলআবিবে নিরাপদে নিয়ে গিয়েছিল!
নৌ শক্তি
১০১টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে বিশ্বে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে ইরান। অন্যদিকে ৬৭টি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান ৪৬তম।
যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ, হেলো ক্যারিয়ার ও ডেসট্রয়ারের সংখ্যার দিক থেকে ইরান ও ইসরায়েল একই অবস্থানে। এই তিনটি ক্ষেত্রেই তাদের সক্ষমতা শূন্য। ইসরায়েলের ৫টি সাবমেরিনের বিপরীতে ইরানের আছে ১৯টি। সাবমেরিনের হিসাবে ইসরায়েলের অবস্থান ১৯ ও ইরানের অবস্থান ৭।
৭টি ছোট যুদ্ধজাহাজ বা ফ্রিগেটস নিয়ে র্যাংকে দশম অবস্থানে থাকা ইরানের বিপরীতে ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিগেট সংখ্যা শূন্য। ১০টি করভেট নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান বিশ্বে দশম এবং ৩টি নিয়ে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে ইরান।
পেট্রোল ভেসেলসে এগিয়ে ইসরায়েল। দেশটির ৪৫ ভেসেলের বিপরীতে (র্যাংক ২২) ইরানের আছে ২১টি (র্যাংক ৪০তম)। তবে, বিভিন্ন ধরনের মাইনের ক্ষেত্রে এগিয়ে ইরান। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ২১তম এবং ইসরায়েলের অবস্থান ১৪৫তম৷
লজিস্টিকস
এয়ারপোর্টের সংখ্যায় ইসরায়েলের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ইরান। ইরানের ৩১৯টির বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ৪২টি এয়ারপোর্ট।
মার্চেন্ট মেরিনেও এগিয়ে ইরান। দেশটির মার্চেন্ট মেরিনের সংখ্যা ৯৪২টি (২০তম), অন্যদিকে ৮৭তম অবস্থানে থাকা ইসরায়েলের আছে ৪৫টি। বন্দর ও টার্মিনালের সংখ্যায় প্রায় সমান দেশ দুটি। ইরানের আছে ৪টি বন্দর ও টার্মিনাল। অন্যদিকে ইসরায়েলের আছে ৫টি।
ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার
ড্রোন ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিকায়নে ইরানের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে বরাবরই শঙ্কিত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এর সঙ্গে গত এক দশকে ইরানের মিত্রদেশগুলো আধুনিক যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন অস্ত্রের প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে বলেও পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে খবর প্রচার করেছে। সব মিলিয়ে বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর হয়ে উঠেছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর চেয়ে ইরানের কাছে সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন রয়েছে। দেশটির কাছে এমনো ড্রোন আছে, যেগুলো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এসব ড্রোনের বিশেষত্ব হলো-এগুলো খুবই নিচ দিয়ে উড়তে পারে। ফলে ড্রোনগুলো রাডারে ধরা পড়ে না। এ ছাড়া ইরানের রয়েছে ক্রুজ ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ইসরায়েল। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি বলে উল্লেখ করেছে। ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের এমন নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র-
খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্র (খাইবার)
পাল্লা : ২ হাজার কিমি।
দৈর্ঘ্য : ১৩ মিটার। ব্যাস : ১.৫ মিটার। ওজন : ৩০ টন।
ওয়ারহেড ওজন : ১৫০০ কেজি
গতি : বায়ুমন্ডলের বাইরে ১৬ ম্যাক/ বায়ুমন্ডলের ভিতরে ৮ ম্যাক।
হাজি কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : ১৪০০ কিমি
ইরান গত শনিবার ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়
দৈর্ঘ্য : ১১ মিটার
ব্যাস : ৮৫ থেকে ৯৫ সেমি
ওজন : ৭ টন
ওয়ারহেড ওজন : ৫০০ কেজি
গতি : ৫ ম্যাক
খায়বার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : ১৪৫০ কিমি
দৈর্ঘ্য : ১০.৫ মিটার
ব্যাস : ৮০০ মিমি
ওজন : ৪৫০০ কেজি
ওয়ারহেড ওজন : ৫০০ কেজি
গতি : ঘণ্টায় ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি
সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : ২,০০০-২,৫০০ কিমি
দৈর্ঘ্য : ১৭.৫৭ মিটার
ব্যাস : ১.২৫ মিটার
ওজন : ২৩ টন
ওয়ারহেড ওজন : ৫০০ কেজির বেশি
গতি : ১২-১৪ ম্যাক
পাভে ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : ১,৬৫০ কিমি
উড়ন্ত উচ্চতা : ৫০ মিটারের কম
গতি : ৬০০-৯০০ কিমি/ঘণ্টা
ফাত্তাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : ১,৪০০ কিমির বেশি
দৈর্ঘ্য : ১২ মিটার
ব্যাস : প্রথম অংশ : ৮০ সেমি / দ্বিতীয় অংশ : ৫০ সেমি
ওজন : ৩,৫০০-৪,১০০ কেজি
ওয়ারহেড ওজন : ৫০০ কেজি
গতি : ৫ ম্যাক।
কদর ক্ষেপণাস্ত্র (ট্রিপল)
পাল্লা : ১, ৯৫০ কিমি পর্যন্ত
দৈর্ঘ্য : ১৫.৫-১৬.৫ মিটার
ব্যাস : ১.২৫ মিটার
ওজন : ১৭, ৪৮০ কেজি পর্যন্ত
ওয়ারহেড ওজন : ৭০০ থেকে ১০০০ কেজি
গতি : প্রায় ৯ ম্যাক
এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : প্রায় ১,৭০০ কিমি
দৈর্ঘ্য : ১৫.৫ মিটার
ব্যাস : ২.১৮ মিটার
ওজন : ১,৭৫০ কেজি
শাহাব-৩ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা : প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার
দৈর্ঘ্য : প্রায় ১৬ মিটার
ব্যাস : ১.২ মিটার
ওজন : ১,৭৮০ কেজি
ইরানের তুরুপের তাস হরমুজ প্রণালি
সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নয়, ইরানের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে হরমুজ প্রণালি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনে হলেও হরমুজ প্রণালিতে ইরানের আধিপত্য রয়েছে। ইরান চাইলে যেকোনো সময় বন্ধ করে দিতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রান্সজিট। পশ্চিমা বিশ্ব এ নিয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন। হরমুজ প্রণালির সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ থেকে ইরান এবং ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল। একদিকে পারস্য উপসাগর, অন্যদিকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগর। এখানে সংযোগ স্থাপন করেছে এই প্রণালি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়া, ইউরোপসহ পুরো বিশ্বে তেল সরবরাহের একমাত্র পথ এটি। বিশ্বে প্রতিদিন ব্যবহৃত তেলের এক-পঞ্চমাংশ এই প্রণালি দিয়েই আনা-নেওয়া করা হয়। প্রতিদিন চলাচল করে অন্তত ৮৫টি তেলবাহী জাহাজ। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ আট দেশ- ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের সঙ্গে পুরো বিশ্বের সমুদ্রপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই প্রণালি। বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম হবে আকাশচুম্বী। এর ধারাবাহিকতায় বাড়বে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা
এক কথায় বলা যায়, কেবলমাত্র আকাশ প্রতিরক্ষা, ভৌগোলিক অবস্থান ও পারমাণবিক অস্ত্রের হিসাবে ইরানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। আর ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে জনসংখ্যা, স্থলশক্তি, নৌশক্তি, লজিস্টিক, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে।
যদিও সামরিক শক্তিমত্তার এই তুলনার পাশাপাশি এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :