মার্কিন পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন ২০০৯ সালে মারা যাওয়ার সময় ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা) বেশি ঋণে ছিলেন। আজও সেই ঋণ শোধ হয়নি। আদালতের নথি থেকে জানা গেছে, জ্যাকসনের পাওনাদারের সংখ্যা ৬৫-এর বেশি।
গত ২১ জুন, লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টে জ্যাকসনের এস্টেটের নির্বাহকদের দায়ের করা একটি পিটিশনে এই বিস্ময়কর তথ্যটি প্রকাশ করা হয়েছে। একপ্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। জানা গেছে, পিটিশনে জ্যাকসন যে আর্থিক অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন তা তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে গায়কের বাতিল করা লন্ডনের কনসার্ট ‘দিস ইজ ইট’-এর প্রোমোটার এইজি লাইভের ৪০ মিলিয়ন ডলার দায় রয়েছে।
আদালতের নথি থেকে জানা যায় যে জ্যাকসনের মৃত্যুর সময় ৬৫ জনেরও বেশি পাওনাদারের পাওনা ছিল। পিটিশনে ২০১৮ সাল থেকে আইনি ফি এবং অন্যান্য খরচ পরিশোধের জন্য জ্যাকসনের ২ বিলিয়ন ডলারের এস্টেট থেকে তহবিলের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। নির্বাহকগণ সফলভাবে এই মামলাগুলোর অধিকাংশই নিষ্পত্তি বা খারিজ করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর সময়, ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি ঋণ এবং পাওনাদারদের দাবি ছিল, যার মধ্যে কিছু ঋণ অত্যন্ত উচ্চ সুদের হারে নেয়া হয়েছিল এবং কিছু ঋণ খেলাফ করা হয়েছিল। এগুলো মাইকেল জ্যাকসনের জন্য বোঝা ও প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বেহিসাবী খরচের কারণে ঋণে ডুবে গিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। এই ব্যয়ের সিংহভাগ খরচ হয়েছে জুয়েলারির পেছনে। এছাড়াও উচ্চ মূল্যের উপহার, ভ্রমণ, চিত্রকর্ম এবং বিলাসবহুল আসবাবের পেছনে খরচ করতেন তিনি।
মামলার বিবাদীপক্ষের সাক্ষী উইলিয়াম অ্যাকারম্যান লস অ্যাঞ্জেলেস আদালতকে জানান, জ্যাকসনের মিনি থিম পার্ক নেভারল্যান্ড রেঞ্চের খরচও ছিল বিপুল। সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মী, চিড়িয়াখানা এবং পার্কে ঘোরার জন্য একটি ট্রেন রয়েছে। এসবের পেছনে জ্যাকসনের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে যেত। এ ছাড়া ঋণের সুদ পরিশোধের পেছনেই তাঁর সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়ে যেত। ২০০৯ সালে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে জ্যাকসনকে শুধু ঋণ পরিশোধের জন্য বছরে খরচ করতে হতো ৩ কোটি ডলার। ঋণের সুদ বছর বছর বাড়ছিল। এই সুদ শুরুতে ৭ শতাংশের কম ছিল। পরে বেড়ে বাৎসরিক সুদ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়ায়।
অ্যাকারম্যান লস অ্যাঞ্জেলেস আদালতকে আরও জানান, ১৯৯৩ সাল থেকেই জ্যাকসনের ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। ১৯৯৮ সালে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ কোটি ডলারে। জুন ২০০১ থেকে জুন ২০০৯ সেই অঙ্ক ১৭ কোটিতে পৌঁছায়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক অব আমেরিকা থেকে প্রায় ২৭ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিলেন। ব্যাংকটি ২০০৫ সালে সেই ঋণ আবার ফরট্রেস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। এই প্রতিষ্ঠান মন্দ ঋণ কেনাবেচার বাণিজ্য করে।
একুশে সংবাদ/বা.প্র/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :