যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসতে চলেছে বলে আভাস দেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ৪ কোটি ৬০ লাখ ব্রিটিশ ভোটার ভোট দিচ্ছেন। রাত ১০টা পর্যন্ত তারা ভোট দিতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, স্বাস্থ্য, আবাসন সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয়, অভিবাসন ও বৈদেশিক নীতির মত বিষয়গুলো। মূলত এসব ইস্যুতে ব্যর্থতার ভারে কাবু কনজারভেটিভ দল।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে গত ২২ মে আকস্মিক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ঋষি সুনাক। আর এই সিদ্ধান্ত যে ‘আত্মঘাতী’ ছিল- তা বোঝা যাচ্ছে ভোটের মাঠের সমীকরণে।
মূলত কনজারভেটিভ সরকারের আমলেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য আলাদা হয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) বিষয়টি ভালোভাবে নেননি অধিকাংশ নাগরিক। এছাড়া নেতৃত্ব সংকট, আর্থিক দুরাবস্থাও রয়েছে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময় থেকে ব্রিটেনের ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যাসহ সম্প্রতি অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলটির ওপর বিরক্ত সাধারণ মানুষ। টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা টোরি পার্টির নেতৃত্বের প্রতিও আস্থা রাখতে পারছেন না ভোটাররা।
বিভিন্ন জনমত জরিপের বরাতে রয়টার্স বলছে, ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও এবার কনজারভেটিভ পার্টিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসবে কেয়ার স্টারমারের বিরোধী দল লেবার পার্টি। আবার অনেক ভোটার এখন দেশে একটা পরিবর্তন চাইছেন। কারণ এই ১৪ বছরে কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে তারা অনেক অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অশান্তি দেখেছেন। মাত্র ১৪ বছরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে পাঁচবার পরিবর্তন এসেছে।
ভোটারদের এমন মনোভাবের ওপর ভর করে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন ৬১ বছর বছর বয়সী স্টারমার। লেবার পার্টির এই প্রধান একজন সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ভোটারদের উদ্দেশে স্টারমার বলেন, আজ ব্রিটেন একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। আমরা কনজারভেটিভ পার্টির অধীনে আরও পাঁচ বছর থাকতে পারব না। তবে লেবার পার্টিকে ভোট দিলেই এই পরিবর্তন আসবে।
অন্যদিকে পঞ্চম বারের মতো নির্বাচনে জিতে আবারও ক্ষমতায় আসার দাবি এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছেন সুনাক। তার পরিবর্তে তিনি ভোটারদেরকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে কী বিপদ হতে পারে, সে সম্পর্কে সতর্ক করছেন।
সুনাক বলেন, লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে দেশের কর বৃদ্ধি করবে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাপ্রাপ্ত হবে। একই সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্রিটেনকে আরও দুর্বল করে দেবে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে লেবার পার্টি।
ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ এই নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী লড়ছেন। ৯ নারীসহ মোট ৩৪ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশিও রয়েছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে।
একুশে সংবাদ/স.চ.প্র/জা.হা
আপনার মতামত লিখুন :