যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার কয়েক মিনিট আগে নির্বাচনি সমাবেশের বাইরে থাকা একটি ভবনের ছাদে একজন বন্দুকধারীকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। খবর বিবিসির।
এদিকে রিপাবলিকান সিনেটর জেডি ভ্যান্স ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন। ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্স বলেন, ট্রাম্পের প্রতি বাইডেনের ‘আক্রমণাত্মক’ ভাষা ব্যবহারের ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। খবর আল জাজিরা
তবে প্রেসিডেন্টসিয়াল স্টাডিজের অধ্যাপক বারবারা পেরি আল জাজিরার সঙ্গে এ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার সময় ডেভি ভ্যান্সের ওই বিবৃতিকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন। বারবারা পেরি আল জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় বাইডেনকে দায়ী করা বাড়াবাড়ি এবং সম্পূর্ণ বানোয়াট।’
তিনি বলেন, বাইডেন একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। এজন্য তিনি সুবিধা নেয়ার জন্য প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় বাইডেন জড়িত। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এদিকে, নির্বাচনী সভায় ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় হতভম্ব হয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এক্স পোস্টে তিনি বলেন, ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এটা জেনে খুশি যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিরাপদে রয়েছেন। তিনি বলেন, মার্কিন রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমাদের অবশ্যই একে প্রতিহত করতে হবে।
গ্রেগ স্মিথ নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাটলার কাউন্টিতে নির্বাচনি সমাবেশের বাইরে থাকা একটি ভবনের ছাদে এক ব্যক্তিকে তিনি রাইফেল হাতে হামাগুড়ি দিয়ে থাকতে দেখেন। বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন।
গ্রেগ স্মিথ বলেন, ‘আমি ওই লোকটিকে দেখার পর নিজেই নিজেকে বলছিলাম কেন ট্রাম্প এখনও কথা বলছেন। কেন তাকে মঞ্চের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না...পরের ঘটনা আপনাদের জানা, আমি পাঁচটি গুলির শব্দ পেয়েছি।’
পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে এই হামলার পরপই সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ঘিরে ফেলেন নিরাপত্তারক্ষীরা এবং নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি করে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে আনা হয়। এ সময় তার মুখমণ্ডলে রক্ত দেখা যায় এবং ট্রাম্প জানান একটি বুলেট তার ডান কানের উপরের অংশ চিড়ে বেরিয়ে যায়।
হামলার পরপর ওই বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মারা যায়। গ্রেগ স্মিথ জানান, তিনি দেখেছেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা ওই বন্দুকধারীকে গুলি করছে।
সমাবেশের বাইরে থেকে বক্তব্য শুনতে থাকা গ্রেগ স্মিথ পরে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই ওই লোকটি ৫০ ফুট দূরের একটি ভবনের ছাদে হামাগুড়ি যাচ্ছে। তার হাতে ছিল একটি রাইফেল, আমরা পরিষ্কারভাবে তার রাইফেলটি দেখতে পাচ্ছিলাম।’
গ্রেগ স্মিথ বলেন, ‘আমরা তাকে দেখিয়ে দিচ্ছিলাম। এর পরপরই পুলিশ মাঠের চারপাশে ছুটোছুটি শুরু করে। পুলিশ সদস্যরা ঠিক বুঝতে পারছিল না কী ঘটনা ঘটছে।’
স্মিথ জানান, তিনি তিন থেকে চার মিনিট ধরে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছিলেন। তবে এ সময় পুলিশ সদস্যরা ছাদের ঢালু কিনারার কারণে হামলাকারীকে দেখতে পারছিলেন না।
গ্রেগ স্মিথ বলেন, ‘ওই ভবনের ছাদে কেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ছিলেন না, এটা তেমন বড় জায়গা নয়। এটা নিরাপত্তা ব্যর্থতা, শতভাগ নিরাপত্তা ব্যর্থতা।’
স্মিথ জানান, তিনি দেখতে পান নিরাপত্তাকর্মীরা বন্দুকধারীকে গুলি করছে। তারা হামাগুড়ি দিয়ে ছাদে ওঠে, এ সময় তারা ওই ব্যক্তির দিকে বন্দুক তাক করে থাকে, নিশ্চিত হয় যে হামলাকারী মারা গেছে। এর পরপরই সব কিছু থেমে যায়।
মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্থনি গাগলিয়েলমি জানান, নিরাপত্তা কর্মীরা হামলাকারীকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করে এবং খুব দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়। এই ঘটনাকে হত্যাচেষ্টা হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।
সিক্রেট সার্ভিস আরও জানায়, এই ঘটনায় নির্বাচনি সমাবেশে থাকা একব্যক্তি নিহত এবং আরও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে, নির্বাচনী সভার ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দূর থেকে ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এতে এআর স্টাইলের রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :