দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ দেশ পাপুয়া নিউগিনিতে গোলাগুলিতে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির বিতর্কিত একটি স্বর্ণখনি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতি দলগুলোর মধ্যে গোলাগুলিতে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ওই এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশটির এনগা প্রদেশের পোরগেরা সোনার খনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনার খনির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতিদের মধ্যে ধারাবাহিক গোলাগুলির ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দেশটির পুলিশ কমিশনারের মতে, ‘মারাত্মক প্রাণঘাতী শক্তির’ ব্যবহারসহ সংঘাত বন্ধ করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে জরুরি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পোরগেরা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে ছিল স্থানীয় পিয়ান্দ উপজাতির নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গত অগাস্টের কোনো এক সময় সেখানে সাকার গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বসতি গড়লে অস্থিরতা শুরু হয়।
পুলিশ বলছে, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়া পর রোববার তিনশরও বেশি গুলি চলে।
‘অবৈধ খনির শ্রমিক আর বসতি স্থাপনকারীদের কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তারা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং জমির মালিকদের হয়রানি করতে সহিংসতাকে কাজে লাগাচ্ছে,’ বলেন পাপুয়া নিউ গিনির পুলিশ কমিশনার ডেভিড ম্যানিং।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়ে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘সোজা কথা, লোকালয়ে অস্ত্র তুলে নিলে, অথবা কাউকে ভয় বা হুমকি দিলে গুলি চালানো হবে।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তীব্র সহিংসতার পরিস্থিতিতে কানাডার মালিকানাধীন পাপুয়া নিউ গিনির দ্বিতীয় বৃহত্তম খনির কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পোস্ট-কুরিয়ার জানায়, গোলাগুলির পাশাপাশি ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয়েছে হাসপাতাল ও সরকারি অফিসসমূহ।
পোরগেরা সোনার খনি একসময় পাপুয়া নিউ গিনির বার্ষিক রপ্তানি আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় জাতিগত সহিংসতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্পাদন বন্ধ রাখা হয়। সাম্প্রতিক এই সহিংসতাকে ‘নজিরবিহীন’ বলছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
দেশটির পার্বত্য অঞ্চলে মাঝেমধ্যেই জাতিগত সংঘাতের খবর পাওয়া যায়। চলতি বছরের শুরুতে ইস্ট সেপিক প্রদেশের তিনটি গ্রামে হামলায় ১৬ শিশুসহ অন্তত ২৬ জন নিহত হয়। ২০২২ সালে খনি এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে গোলাগুলিতে অন্তত ১৭ জনের প্রাণ যায়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটিতে সফরে গিয়ে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান পোপ ফ্রান্সিস।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :