ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ সপ্তাহে চীন সফর করবেন বলে জানিয়েছে বেইজিং। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার নির্বাচিত হওয়ার পর এটি যুক্তরাজ্যের কোনো কর্মকর্তার প্রথম বেইজিং সফর। হংকংয়ে বেইজিংয়ের নিরাপত্তা অভিযান এবং চীনের অশান্ত জিনজিয়াং অঞ্চলসহ বেশ কিছু মানবাধিকার উদ্বেগের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এখন তারা সে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।
বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বৃহস্পতিবার বলেছেন যে ল্যামি ‘১৮ থেকে ১৯ অক্টোবর চীনে সরকারি সফর করবেন’। বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানায়। বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মাও বলেন, আগস্টে এক ফোনালাপে দুই পক্ষের মধ্যে ‘তাদের নেতৃবৃন্দের দ্বারা উপনীত ঐকমত্য বাস্তবায়নে গভীরভাবে মতবিনিময় হবে’।
মাও বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাজ্য উভয়ই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং প্রধান বিশ্ব অর্থনীতি।’ তিনি আরো বলেন, দীর্ঘমেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন উভয় দেশের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
মাও সাংবাদিকদের বলেন, বেইজিং ‘কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি এবং সকল ক্ষেত্রে সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদারের’ আশা করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘চীন অংশীদার হিসাবে দু’দেশের অবস্থান সমুন্নত করতে, উন্মুক্ততা ও সহযোগিতা বজায় রাখতে... এবং চীন-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালাতে যুক্তরাজ্যের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।’
২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লন্ডন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কের ‘স্বর্ণযুগ’কে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু’দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে।
যুক্তরাজ্য হংকংয়ে কয়েক মাস ধরে চলা গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের পর ২০২০ সালে হংকংয়ে বেইজিংয়ের ঢালাওভাবে জাতীয় সুরক্ষা আইন আরোপ করার সমালোচনা করে।
লন্ডন এই পদক্ষেপটিকে হংকংয়ের অধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষ্ণুণ্নকারী হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। তবে বেইজিং মনে করে, এ আইন হংকংয়ের স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন হওয়ার পর এতে শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করেছে।
সফরের প্রাক্কালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জেলবন্দী হংকংয়ের ধনকুবের জিমি লাইকে হংকংয়ের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে লাইয়ের আইনি দল লন্ডনে সাংবাদিকদের বলে যে তারা আশা করে যে ল্যামি তার সফরের সময় জিমি লাইয়ের বিষয়টি ‘সামনে ও কেন্দ্রে’ রাখবেন। এ সব বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বেশকিছু উদ্বেগের কারণে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে চীনের আচরণ এবং তিব্বতে মানবাধিকার নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাদানুবাদ চলমান রয়েছে। লন্ডন অভিযোগ করছে বেইজিং জিনজিয়াংয়ে প্রায় এক মিলিয়ন উইঘুর মুসলিমকে আটক রেখেছে।
স্টারমার এ সপ্তাহে তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়ার পর চীনের কঠোর সমালোচনা করেছে। চীন স্ব-শাসিত গণতান্ত্রিক দ্বীপটিকে তার মূল ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনে এটি দখল করতে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টিও নাচক করে না।
স্টারমার বলেন, তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের তৎপরতা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’র অনুকূল নয়। তিনি বেইজিংকে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ারও আহ্বান জানান।
চীন ও যুক্তরাজ্য একে অপরের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে থাকে। বেইজিং অভিযোগ করে যে লন্ডন বেইজিংয়ের প্রতি ওয়াশিংটনের বৈরী পথই অনুসরণ করে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :