AB Bank
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

একদিনে হাজার কোটি ডলার হারালেন আদানি


Ekushey Sangbad
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৩:৫৫ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
একদিনে হাজার কোটি ডলার হারালেন আদানি

ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুস-জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বুধবার (২০ নভেম্বর) নিউইয়র্কের একটি আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঘুষকাণ্ডে জড়িত এবং বিষয়টি গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্থও সংগ্রহ করেছেন। এ অভিযোগ দাখিল করার পর পরই আদানি গ্রুপের বিভিন্ন শেয়ারের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়। বিশেষ করে আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি পাওয়ারের শেয়ারগুলো বড় ধরনের পতনের মুখোমুখি হয়।

এ ঘটনায় একদিনে আদানি গ্রুপ ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা হারানো ও আইনি ঝুঁকিকে পতনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আদানি গ্রুপের ডলার বন্ডের দামও রেকর্ড ১৫ সেন্ট পর্যন্ত কমেছে।

বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংকট আদানি গ্রুপের বৈশ্বিক অবস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মামলা সম্পর্কে কোম্পানির পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।গত বছর জানুয়ারিতে এক সপ্তাহেই প্রায় ২৫০০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত ধনসম্পদ উধাও হয়ে গেছে আদানির। সে সময় নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।

বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ গতবছর তাদের রিপোর্টে আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে “কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির” অভিযোগ করেছে। নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক এই কোম্পানির “শর্ট-সেলিং” এর ব্যাপারে বিশেষত্ব রয়েছে। এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেলে, সুবিধা অর্জনের জন্য, ওই শেয়ারের ব্যাপারে আর্থিক অবস্থান নিয়ে থাকে।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।রিপোর্টেও আরো দাবি করা হয় যে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ রয়েছে - যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে আরো অভিযোগ করা হয় যে ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।আদানি গ্রুপ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তারা অস্বীকার করেছে।

পরিষ্কারভাবে, আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার মূল্যের ওপর এই রিপোর্ট এবং তার অসমর্থিত তথ্যের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ নিজেরাই স্বীকার করেছে যে আদানির শেয়ার পড়ে যাওয়া থেকে তারা লাভবান হবে, বলছে আদানি গ্রুপ। আদানি এই হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। এর পরপরই হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে তারা এ বিষয়ে আদালতে লড়াই করতে প্রস্তুত।

ভারতের গুজরাটে ১৯৬২ সালে জন্ম নেন গৌতম আদানি। ব্লুমবার্গ লিখেছে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করেননি। এরপর তিনি তার পিতার গার্মেন্টস ব্যবসায় যোগ না দিয়ে, হীরার ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। আরো পরে তিনি তার ভাইয়ের প্লাস্টিক কারখানা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৮৮ সালে তিনি আদানি এক্সপোর্টস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন- যা পরে আদানি এন্টারপ্রাইজেসে পরিণত হয়। তার বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে এটিই মুখ্য প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমেই আজ তার অঢেল সম্পদ। আদানি গ্রুপের অধীনে রয়েছে মোট সাতটি কোম্পানি।

বন্দর ব্যবস্থাপনা, কয়লা উৎপাদন এবং কয়লার ব্যবসা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন, গ্যাস সরবরাহ, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সরঞ্জাম উৎপাদন, বিমানবন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহন, আবাসন, ভোজ্যতেল, খাদ্যপণ্য এরকম নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির।

আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনের কারণে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতীয় বাজারে এ ঘটনা শুধু আদানি গ্রুপকে নয়, বরং পুরো শেয়ারবাজারকেই প্রভাবিত করছে। আদানি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঝুঁকি বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘ মেয়াদে আদানি গ্রুপের ব্র্যান্ড এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে কোম্পানিগুলো তাদের বড় প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহেও সমস্যায় পড়তে পারে।

দরপতনের কারণে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি গ্রুপের বাজারমূল্য এক ধাক্কায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কমেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো ইতিমধ্যে গ্রুপের বেশ কিছু কোম্পানির রেটিং নিম্নগামী করার সতর্কতা দিয়েছে।

তবে আদানি গ্রুপ এর আগে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা সব ধরনের নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে। গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের আর্থিক লেনদেন এবং করপোরেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। আমরা সব আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করব যে আমরা নির্দোষ।

সামগ্রিক চিত্র

গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলার প্রভাব ভারতের শেয়ারবাজারে শুধু তাৎক্ষণিক নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এটি দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে আদানি গ্রুপকে স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে, ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তাদের উচিত এ মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই ঘটনার প্রভাব কেবল আদানি গ্রুপের শেয়ারে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভারতের করপোরেট জগৎ এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশের ওপরেও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবে।

একুশে সংবাদ/ এস কে

Link copied!