ভারতের বিতর্কিত ও অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ-জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় গৌতম আদানিকে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। এছাড়া সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন রাহুল।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানি দু’জনেই দুর্নীতিগ্রস্ত। এখনই আদানিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। কিন্তু আদানিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা মোদির নেই। কারণ, তিনি নিজেই রয়েছেন আদানির নিয়ন্ত্রণে। আদানিকে সব সময় সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন নরেন্দ্র মোদিই।’
গত বুধবার (২০ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি অফিস থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে গৌতম আদানিসহ অন্য কয়েকজনকে কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ, এক সৌর শক্তি প্রকল্প পেতে ভারতীয় সরকারি কর্তাদের তারা ২ হাজার ২৩৭ কোটি রুপি ঘুষ দিয়েছিলেন। প্রকল্পের বিনিয়োগকারী ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে তারা এই তথ্য গোপন করেছিলেন। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বন্ড মারফত লগ্নির চেষ্টা করেছিলেন। এবং সে সময় ঘুষের বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন।
গৌতম আদানি ছাড়াও ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছেন তার ভাইয়ের ছেলে সাগর আদানি। আর আছেন আদানি গ্রিণ এনার্জি লিমিটেডের সিইও বিনীত জৈন, রঞ্জিত গুপ্ত, রুপেশ আগরওয়াল, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের নাগরিক সিরিল ক্যাবানেস, সৌরভ আগরওয়াল ও দীপক মালহোত্রা।
গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।আদানির বিরুদ্ধে রাহুল অনেকদিন ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন। ভারতীয় সংসদেও তিনি বারবার মোদি–আদানি সম্পর্ক নিয়ে সরব হয়েছেন। গতকাল বুধবার শেষ রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই খবর আসার পর আজ বৃহস্পতিবারই রাহুল কংগ্রেসের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন।
কংগ্রেস নেতা বলেন, এতদিন ধরে যা তারা বলে আসছেন, আজ আরেকবার তা সত্যি প্রমাণিত হলো। রাহুল বলেন, গৌতম আদানি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেরই আইন ভেঙেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযুক্ত হয়েছেন। এরপরও উনি কীভাবে মুক্ত থাকেন? এ দেশে ১০–১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীরা গ্রেফতার হন। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেও গৌতম আদানির কিছু হয় না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজেই আদানির দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
রাহুল বলেন, মোদি ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ (একত্রে থাকলে নিরাপদ থাকবে) মন্ত্রে বিশ্বাসী। আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত হলেই মোদির নাম আসবে। তাই তদন্ত হয় না। গোটা বিজেপি দলটাই চলছে আদানির টাকায়। আজ আরেকবার প্রমাণিত হলো, মোদি দুর্নীতিগ্রস্ত। আদানি তার কাঁধের ঝোলা।
এর আগে রাহুল গান্ধী সংসদে মোদি–আদানি সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বাংলাদেশ, শ্রীলংকায় আদানির হয়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। শ্রীলংকা, কেনিয়ায়ও হচ্ছে। মোদি যে দেশ সফর করেন, সেখানেই আদানি গোষ্ঠী প্রকল্পের বরাত পায় এবং দেশের মান সম্মান ডোবান।
আদানি গোষ্ঠী অবশ্য বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ বলেছে, আদানি গ্রিন এনার্জির পরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আদানি গোষ্ঠী সব সময় আইন মেনে চলেছে। সব সময় তারা সব বিষয়ে স্বচ্ছ। নিয়ন্ত্রণ বিধিও সর্বদা মেনে চলে। এই বিষয়ে আদানি গোষ্ঠী সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে।
সম্প্রতি মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ অভিযোগ করে যে, আদানিরা বিদেশে যে টাকা সরিয়েছেন, তাতে অংশীদারি রয়েছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি প্রধান মাধবী এবং তার স্বামী ধবল বুচের।
বৃহস্পতিবার রাহুল অভিযোগ করেন যে, আদানির টাকায় বিজেপি চলে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারে গিয়ে আদানি-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ তুলে রাহুল দাবি করেছিলেন, মুম্বাইয়ের বিমানবন্দরের পরে ধারাভি বস্তির জমিও আদানির হাতে তুলে দিতে চান মোদি। তা থেকে আদানির ১ লাখ কোটি টাকা আয় হবে বলে দাবি করেন রাহুল।
ভারতের সৌর প্রকল্পের জন্য ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ২২৩৭ কোটি টাকা ঘুসের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আদানির বিরুদ্ধে। মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস বলেছেন, অভিযুক্তরা একটি জটিল ষড়যন্ত্র পরিচালনা করেছেন যাতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে চুক্তি করতে এবং মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আর্থিক বাজারের সততা রক্ষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। অভিযোগ করা হয়েছে, ঘুষকাণ্ড এগিয়ে নিতে গৌতম আদানি নিজেই একাধিকবার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ধনকুবের আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, আদানি তার রাজনৈতিক সংযোগের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এমন সময়ে দায়ের করা হলো যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মার্কিন বিচার বিভাগে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে ট্রাম্পকে নির্বাচনী জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন আদানি। যুক্তরাষ্ট্রে মামলার বিষয়ে আদানি গ্রুপ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সূত্র: রয়টার্স
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :