গতকাল মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চলতি বছরের মাঝামাঝিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসরণ করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, "আমরা তো কারো ইচ্ছে পূরণ করতে বসিনি। আমরা আগামী ডিসেম্বর বা পরের জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। এর আগে আমাদের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সবার যেটা চাওয়া একটা ভালো নির্বাচন, সেই নির্বাচনের জন্য আমাদের সময় দিতে হবে। আমরা তো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) না। আগামী ২০ জানুয়ারি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হবে। এটা একমাস চলবে। এরপর কিছু আইন পরিবর্তনের বিষয় আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সময় দিতে হবে। এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত মত না, আমাদের গোটা কমিশনের অভিমত।”
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবাদ সম্মেলনে তিনি চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার করে বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট বিষয়। আমরা মনে করি যে, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-অগাস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এই কারণে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি- দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়েই মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে পারি।`
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ২০২৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ইতিমধ্যে নির্বাচন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা দেখছি, দেশের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ফলে যত দ্রুত একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়, সেটা দেশের সবার জন্য মঙ্গল। আমরা তো সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিয়েছি। আমরা তো তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাইনি। এক বছর যৌক্তিক সময়। বিএনপি সেই দাবিই করেছে।
গত রবিবার ইসির বৈঠক শেষে কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, কমিশনের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন, সেদিকে এগোচ্ছেন তারা। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ চান আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদের এমন বক্তব্য দেয়ার পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদ আহমদ জানান, "এই মুহুর্তে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না নির্বাচন কমিশন। আমাদের প্রধান লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন, সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে কমিশন।”
এর মধ্যে গত শনিবার জাতীয় নাগরিক কমিটি গণঅভ্যুত্থানের পর স্থানীয় সরকার কাঠামো ‘ভেঙে পড়ায়` নাগরিকরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে মন্তব্য করে বলেছে, ‘‘এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে।”
তবে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্ত শারমিন বলেন, আমরা বলেছি, এখন কোনো জাতীয় নির্বাচন আমরা চাই না। আমরা চাই একটা গণপরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয়ীরা নতুন করে একটা সংবিধান লিখবে। পরবর্তীতে এই গণপরিষদই জাতীয় পরিষদে রুপান্তরিতত হবে। শুরু থেকেই আমরা এ কথা বলছি।
নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময় ধরে ভোটের প্রস্তুতি চলছে। ইউএনডিপির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সচিবের সঙ্গে কারিগরি সহায়তার বিষয়ে বৈঠক করেন তারা।
ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইসি সচিব বলেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের ব্যাপারে আমার মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, বিষয়গুলো আমি জানি না। আমাদের প্রস্তুতিটা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় যে উইন্ডো দিয়েছেন, সে উইন্ডো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
বিএনপির নির্বাচনের দাবির ব্যাপারে জাতীয় পার্টির (এ) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমরাও চাই দ্রুত নির্বাচন হোক। কারণ, এই সরকার জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তারা তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করতে পারিনি। ফলে তাদের সংস্কার কার্যাক্রম সর্বসম্মত হবে না। এই কারণে তাদের সংস্কারের দিকে না গিয়ে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত হবে। কিন্তু তার আগে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। এখন তো দেশে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আমাদের সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। বিনা কারণে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন। পাশাপাশি অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তো আমাদের পক্ষে নির্বাচন করা মুশকিল।
একই ধরনের দাবির কথা বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
তিনি বলেন, আমরাও চাই দ্রুত নির্বাচন হোক। কারণ, এই সরকার জনগণের দাবি-দাওয়ার প্রতি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। নতুন করে শুল্ক আরোপে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাই তাদের উচিত হবে দ্রুত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
একুশে সংবাদ/ব.জ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :