জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দেশে নারীর অধিকার হ্রাস পেয়েছে।বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার হাত ধরে লিঙ্গ সমতায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা নারী অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দীর্ঘস্থায়ী ঐকমত্যকে সক্রিয়ভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
নারীর অধিকার সুরক্ষায় ১৯৯৫ সালের বিশ্ব নারী সম্মেলনে ‘বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন’ কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছিল।
সেই সম্মেলনের নথির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক-চতুর্থাংশ দেশ জানিয়েছে, লিঙ্গ সমতার ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে।সম্মেলনের পর থেকে গত ৩০ বছর মিশ্র অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, তবে এখনও বিভিন্ন দেশে পুরুষরা সংসদে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ।২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। তবে দুই বিলিয়ন নারী ও তরুণী এখনও এমন জায়গায় বাস করে, যেখানে এই ধরনের সুরক্ষা নেই।
কয়েক দশকে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানের বৈষম্য পরিবর্তন হয়নি। নারীদের তুলনায় পুরুষদের অনেক বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে। যেখানে ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ৬৩ শতাংশ নারী কর্মী বেতন পাচ্ছে, সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৯২ শতাংশ পুরুষের।প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারি, বৈশ্বিক সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর মতো উদীয়মান প্রযুক্তিকে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে- যার ৯৫ শতাংশের শিকার শিশু বা তরুণী।২০২৩ সালে ৬১২ মিলিয়ন নারী সশস্ত্র সংঘাতপূর্ণ এলাকার ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) মধ্যে বাস করেছেন- যা ২০১০ সালের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার ১২টি দেশে কমপক্ষে ৫৩ শতাংশ নারী অনলাইনে এক বা একাধিক ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে অব্যাহত রয়েছে। তাদের জীবদ্দশায় প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন নারী ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন অথবা সঙ্গী নন, এমন ব্যক্তির দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হন।
প্রতিবেদনে লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবিলার জন্য একটি বহু-অংশী রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো নতুন প্রযুক্তিতে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, জলবায়ু ন্যায্যতার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, দারিদ্র্য মোকাবিলায় বিনিয়োগ, পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও লিঙ্গ সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :