মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল নির্বাচনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ এবং ভোটদানের জন্য নিবন্ধনের সময় নাগরিকত্বের প্রমাণ বাধ্যতামূলক করার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই একের পর এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। `আমেরিকা ফার্স্ট`-এর নীতি বাস্তবায়নে তিনি এই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে দাবি ট্রাম্পের। এই আবহে এবার মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়া বদলের বড় এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। যা শেষ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ আমেরিকানকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো ইতোমধ্যেই আদালতে এটিকে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রাম্প, এখন তার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি প্রায়ই দাবি করেন, মার্কিন নির্বাচনে কারচুপি হচ্ছে। ২০২০ সালে নির্বাচনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তার পরাজয় কখনও স্বীকার করেননি এবং তিনি ব্যাপক নির্বাচনী জালিয়াতির ভিত্তিহীন দাবি বজায় রেখেছেন। বিশেষ করে অনুপস্থিত ভোটদানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময় ট্রাম্প বলেন, ’হয়তো কিছু লোক মনে করে আমার অভিযোগ করা উচিত নয়, কারণ আমরা গত নভেম্বরে বিপুল ভোটে জিতেছি। ’
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনকে আরো সহজ করতে হবে। নির্বাচন, ভুয়া নির্বাচনের কারণে এই দেশ এত অসুস্থ। আমরা যে কোনো ভাবে নির্বাচনকে আরো সহজ করে তুলব।নতুন নিয়ম অনুসারে, আদেশে বলা হয়, নির্বাচনে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়নি।
এরই সঙ্গে আদেশে বলা হয়, যারা মার্কিন নাগরিক নন, তাদের যাতে নির্বাচন কমিশন সহজে চিহ্নিত করতে পারে, তার জন্যেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ভোটার নিবন্ধনের সময় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র পাসপোর্টের মতো নথির মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব রাজ্য এই নির্দেশিকা মেনে চলতে ব্যর্থ হবে, তাদের ফেডারেল নির্বাচনী তহবিল হ্রাস পেতে পারে।
নির্বাহী আদেশ অনুসারে, অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচনের দিনের পরে প্রাপ্ত অনুপস্থিত বা ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট ভোটের চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত করে এই বিধান লঙ্ঘনকারী রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পাবেন।
বেশ কিছু রাজ্য নির্বাচনের দিনের পরে আসা মেইল ভোটিং ব্যালট গণনা করার অনুমতি দেয়, তবে শর্ত থাকে যে তাদের রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে পোস্টমার্ক করা থাকে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাসেনের মতে, এই ‘বিপজ্জনক’ নির্বাহী আদেশ ‘সম্ভাব্যভাবে লক্ষ লক্ষ ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত’ করতে পারে।
হ্যাসেন তার নির্বাচন আইন ব্লগে ট্রাম্পের নির্দেশকে একটি নির্বাহী ক্ষমতা দখল বলে অভিহিত করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে ফেডারেল নির্বাচন মূলত রাজ্যগুলোর দায়িত্ব, যেখানে কংগ্রেস নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিয়ম নির্ধারণ করে।
ব্রেনান সেন্টার, একটি অলাভজনক পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউট, নির্বাহী আদেশের নিন্দা জানিয়েছে, এক্স-এ পোস্ট করে বলেছে যে, এটি ’লাখ লাখ আমেরিকান নাগরিককে ভোটদান থেকে বিরত রাখবে। প্রেসিডেন্টের এটি করার কোনও অধিকার নেই।
শক্তিশালী নাগরিক স্বাধীনতা গোষ্ঠী এসিএলইউ এই আদেশকে ‘ক্ষমতার চরম অপব্যবহার’ বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং আইনি ভাবে চ্যালেঞ্জ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছে।
মার্কিন ফেডারেল নির্বাচনে নাগরিক নয় এমন ব্যক্তিদের ভোটদান কয়েক দশক ধরে একটি ফৌজদারি অপরাধ, আইন অনুসারে জরিমানা, কারাদণ্ড এবং নির্বাসনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :