হট্টগোল, হামলা, ভাঙচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী নির্বাচন ‘একতরফা হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি বলেন, নির্বাচনে আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। আর বিএনপি সমর্থিতরা ভোট বর্জনের ঘোষণাও দেননি।
রোববার (১৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। এসময় সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলালসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য তিনি বিএনপির গণতন্ত্র বিরোধী, ভোট বিরোধী, নির্বাচন বিমুখ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুসকে দায়ী করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান এবং সম্পাদক মো. আবদুন নূর দুলাল সমিতির কনফারেন্স রুমে বসে ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করছিলেন। হঠাৎ করে দরজা ধাক্কা দিয়ে বহিরাগত লোকজনসহ সন্ত্রাসী কায়দায় এ.এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজল কনফারেন্স রুমে ঢুকে আহ্বায়ককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। টেবিলের ওপরে থাকা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে কিছু ছিঁড়ে ফেলেন এবং কিছু নিয়ে যান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক।
এছাড়া ব্যালট পেপার তছনছ করেন এবং পায়ে মাড়িয়ে দলিত মথিত করেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজল। ফলে নির্বাচনের আগের রাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
নির্বাচনের দিন বিএনপিপন্থীরা ভাঙচুর চালিয়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, ভোটগ্রহণ শুরুর চেষ্টা করলে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে অনেক বহিরাগত সন্ত্রাসী প্যান্ডেলে ঢুকে পড়েন ও ব্যাপক ভাঙচুর চালান। অনেক আইনজীবীকে আহত করেন। তারা ভোট বর্জন করেছেন কিনা সেটাও জানাননি। তাদের বিকল্প প্রস্তাব কী তাও জানাননি। তারা এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
ভোটগ্রহণ বিলম্বিত হতে থাকে এবং একটানা ভাঙচুর চলতে থাকে। এ অবস্থায় ভোটগ্রহণ শুরু ও সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ ব্যতীত কোনো বিকল্প অবশিষ্ট ছিল না।
ইতোপূর্বে সব নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়। বর্তমান নির্বাচনেও পদত্যাগকারী আহ্বায়ক মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী সহায়তা চেয়ে চিঠি দেন। এমনকি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন।
সাংবাদিকদের বিষয়ে বক্তব্যে বলা হয়, দুই দিন দায়িত্ব পালনকালে ঘটনার আকস্মিকতায় আপনারা কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সামগ্রিক দায়ভার বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটবিরোধী, নির্বাচন বিমুখ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সামগ্রিক বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল অঙ্গীকারের পরিচয় দিয়েছি।
এর আগে দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে ১৪টি পদের সব কটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছেন।
যদিও নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল বিএনপি সমর্থকরা।
একুশে সংবাদ.কম/স.ট.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :