বিয়ের মতো চিরবন্ধনের সম্পর্ক ইদানীং কেমন যেন ঠুনকো সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। হঠাৎ করেই প্রেম হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে আবার সেই সম্পর্ক রূপ নিচ্ছে বিয়েতে। কিন্তু বিয়ের সম্পর্ক টিকছে না বেশি দিন। অহরহ ঘটছে বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা। তবে বিয়েবিচ্ছেদের পেছনে অনেক কারণ থাকলেও পরকীয়া একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেছন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
পরকীয়ার সম্পর্ক একটি বিষাক্ত সম্পর্ক। একটি সুন্দর, হাসিখুশি সুখের সংসার নিমিষেই গুঁড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এই পরকীয়ার সম্পর্ক।
পরকীয়া সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহিত কামাল।
ড. মোহিত কামাল বলেন, যদি দুই-একটি বিষয়ে মতের অমিল হয়, তবেই বিয়েবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অনেক দম্পতি। কিন্তু এই বিষয়টি মোটেই সঠিক নয়। একজন আরেকজনকে বুঝতে হবে। মতের অমিল হলে সময় দিতে হবে। ভেতরে ভেতরে একে অন্যের প্রতি অভিযোগ না রেখে খোলামেলা কথা বলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কেউ কারো জন্য কিছুই ছাড় দিতে রাজি নন ইদানীংকার দম্পতিরা। তাই বিয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কও চোখের পলকে ভেঙে দিচ্ছেন অনেকেই। এছাড়া যারা বিয়েবিচ্ছেদে যেতে পারছেন না বা যেতে চাচ্ছেন না, তাদের মধ্যে অনেককেই পরকীয়ার মতো অবৈধ একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাই দুজন দুজনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আসুন জেনে নেই কীভাবে বুঝবেন স্বামীর পরকীয়া :
১. অবহেলা : খেয়াল রাখুন আপনার স্বামী আপনাকে অবহেলা করছে কিনা। আপনি যদি স্বামীর কাছ থেকে অবহেলার শিকার হন, তবে বুঝবেন তিনি অন্য কারো প্রতি আসক্ত। হতে পারে সেটি পরকীয়া।
২. ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্ত : সঙ্গী ফোনের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করছেন সেদিকে নজর রাখুন। একসঙ্গে বসে থেকে বা ঘুরতে গেলে যদি তিনি ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন- তাহলে তা নিশ্চিতভাবে অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত।
৩. ফেসবুক : পরকীয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ফেসবুক। শুধুমাত্র ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর দেবেন।
৪. পরিবার : আপনার স্বামী যদি আপনার ও পরিবারের পেছনে কম ব্যয় করেন, তাহলে এটিও একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। খুব ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চেয়ে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে
ব্যয় করছেন।
৫. অজুহাত : স্বামী যদি কারণে-অকারণে অজুহাত দেখায় তবে বুঝতে হবে এটি পরকীয়ার লক্ষণ। তাকে সময় দেয়ার কথা বলে দেখুন, একসঙ্গে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান, আত্মীয়স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন, তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা।
৬. নিজেকে গুটিয়ে নেয়া: স্বামী যদি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে বিনা কারণে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত।
৭. নতুন কোন নাম: আপনার স্বামীর মুখে যদি নতুন কোনো একটি নাম ঘন ঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে বন্ধুটির কথা আগে কখনো শোনেননি, এমন কারো কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়, তবে বিষয়টি অবশ্যই চিন্তার।
৮. অকারণে রেগে যাওয়া: বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করা, কিংবা সবসময় খিটখিট করা পরকীয়ার
অন্যতম লক্ষণ। খেয়াল করে দেখুন তো, আগে যে বিষয়গুলো আপনার সঙ্গীর রাগের উদ্রেক করত না সেসব বিষয়ে কি তিনি রেগে যাচ্ছেন? কিংবা কথায় কথায় আপনাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছেন? তার এসব কথার কোনো যুক্তি আছে কিনা- এই ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করুন।
৯. যৌনসম্পর্ক : আপনার সঙ্গে যৌনসম্পর্কে সঙ্গী যদি উদাসীনতা দেখান তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষণ হিসেবে ধরতে পারেন। যিনি অন্যের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আপনার প্রতি উদাসীন, তার মুখের অভিব্যক্তিই আপনাকে সব কথা বলে দেবে। আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গী আগ্রহী নন, অর্থাৎ তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারো মাধ্যমে। এ ছাড়াও অভ্যাসবশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা- স্রেফ আপনাকে খুশি করতে, সেটিও লক্ষ্য করুন।
১০. নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন: আপনার স্বামী যদি হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে ওঠেন আপনার স্বামী/স্ত্রী যদি হঠাৎ নিজের ত্বক, সাজগোজ, শারীরিক গঠন কিংবা পরিহিত পোশাক-আশাকের দিকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে শুরু করেন, তাহলে আপনি একে পরকীয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
একুশে সংবাদ/য.র.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :