কেবল দেখতেই সুন্দর নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর রঙিন ফুলকপি। এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতেও সক্ষম। এমনটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘রঙিন ফুলকপি চাষের বড় সুবিধা হচ্ছে কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধুমাত্র জৈবসার প্রয়োগ করেই সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়। তাই মারাত্মক ক্ষতিকর ভারী ধাতুর প্রভাব নেই বললেই চলে।’
‘বাজারে সাদা, হলুদ, বেগুনি ও সবুজ রঙয়ের ফুলকপি পাওয়া যায়। প্রচলিত সাদা ফুলকপির চেয়ে এসব রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে। হলুদ ফুলকপিতে ভিটামিন এ এর বিকল্প হিসেবে ক্যারোটিনয়েড থাকে। এমনকি কচুতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ থাকে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ থাকে হলুদ ফুলকপিতে। বাহ্যিক আবরণের কোষ, ত্বক, দাঁত, ও অস্থির গঠনের জন্য ভিটামিন এ জরুরি। বেগুনি রংয়ের ফুলকপিতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন। ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিনে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শাক জাতীয় সবজি ও ফুলকপি ছাড়া অন্যান্য সবজিতে তেমন ফাইবার বা আঁশ থাকে না। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রঙিন ফুলকপিতে প্রচলিত সাদা ফুলকপির চেয়ে ফাইবার অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। রঙিন ফুলকপির আরেকটি বিশেষত্ব হলো অন্যান্য সবজির তুলনায় আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা মানুষের রক্ত ও হাড় গঠন করে। রঙিন ফুলকপিতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ( ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬ এবং বি-১২) থাকে। ভিটামিন বি-২ বা রিবোফ্লাভিন মুখ বা ঠোঁটের ঘায়ের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া সবুজ ফুলকপি ভিটামিন ‘সি’ এর একটি ভালো উৎস।’
ফুলকপি যেহেতু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার তাই এটি সব বয়সের মানুষের জন্য বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধদের জন্য আদর্শ একটি খাবার।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশে রঙিন ফুলকপি সালাদ হিসেবে কাচা খাওয়া হয়। তবে আমাদের দেশের মানুষ কাচা ফুলকপি খাওয়াতে অভ্যস্ত না হওয়ায় হালকা সিদ্ধ করে খেতে পারে। হালকা সিদ্ধ করে খেলে এর পুষ্টিগুণ পুরোটাই বজায় থাকে।’
এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। সাদা ফুলকপির চেয়ে দ্বিগুণ দাম পাওয়ায় দিন দিন রঙিন ফুলকপি চাষে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তারা।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :