রমজান মাস মুসলিমদের জন্য আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক পরিশুদ্ধির মাস। রোজা পালনের মাধ্যমে একজন মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন অংশের দারিদ্র্য, বঞ্চনা এবং দুর্ভিক্ষের মধ্যে বসবাস করা লাখ লাখ মানুষের কষ্ট এবং বেদনা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। একটানা লম্বা সময় পর্যাপ্ত পানাহার না করা, অনিয়মিত ঘুম এবং দুর্বল পুষ্টি যাতে শরীর এবং ত্বকের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য পরামর্শ দিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা।
ত্বকের যত্নের বিষয়ে প্রচলিত বিভ্রান্তিকর ধ্যান-ধারণা দূর করার পাশাপাশি রমজান মাসে রোজা রাখা যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তার ওপর আলোকপাত করেছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনিব শাহ। তিনি বলেন, ‘অনেক চর্মরোগ, যেমন সোরিয়াসিস এবং ব্রণ, সবই সংক্রমণের কারণে হয় এবং কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, রমজান মাসে যারা রোজা রাখেন তাদের মধ্যে সোরিয়াসিসের মতো রোগের তীব্রতা অনেকটাই কমে যায়।’
ডা. মুনিব শাহ বলেন, রোজা রাখার সময়, ত্বক সহজেই আর্দ্রতা হারাতে পারে এবং এতে ত্বকে পানির মাত্রা কমে যায়। তাই রমজানে যারা রোজা রাখেন, তাদের এমন কিছু পণ্য ব্যবহার করতে হবে যা ত্বককে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করবে।
তিনি বলেন, নামাজের আগে ওজু করার সময় কিছু কিছু মানুষের ত্বক বিশেষ করে যারা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী, তাদের ত্বক বারবার ধোয়ার ফলে আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিবার মুখ ধোয়ার পরে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা উচিত। কারণ, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নাহলে এটি প্রোটেকটিভ স্কিন ব্যারিয়ার বা ত্বকের সুরক্ষা প্রাচীরকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
এই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, সেহরিতে যখন খাবার খাওয়া অনুমোদিত, তখন পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে শুধু চর্বিযুক্ত খাবার খেলে সেটি ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রোজাদারদের রোজা ভাঙার সময় সেইসব খাবার খাওয়া উচিত যা তিনি খেতে উপভোগ করেন। তবে সেই খাবার পরিমিত হারে খেতে হবে। ভাজা খাবার খেলেই যে ব্রণ হবে- এমনটা নয়, তবে যেকোনো ধরনের খাবার বেশি খেলে ত্বকের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
ডা. মুনিব শাহ বলেন, ত্বকের যত্নে আপনি যে পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত তার সবই রমজানে ব্যবহার করা সম্ভব। অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, আপনি রোজা রাখার সময় আপনার ত্বকের যত্নের নিয়মিত পণ্যগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। আমি মনে করি আপনি রোজা রাখার সময় আপনার ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
রমজানে ত্বকের যত্নে বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছেন এই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। সেগুলো হলো- ত্বক পরিষ্কার করা, ময়েশ্চারাইজ করা, ক্ষতিকর সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা, রাতে ত্বক পরিষ্কার করা, এমন কোনো ক্রিম ব্যবহার করা যেটায় রেটিনল আছে এবং তারপর আবার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করা।
ইংল্যান্ডের লেইসেস্টার শহরের বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী ফারাহ ফেরেরো বলেন, রমজান মাসে ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্যের ধরন সম্পর্কে, বিশেষ করে কোন ধরনের পণ্য ব্যবহার করা উচিত, কোনগুলো উচিত নয়- এ নিয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, টোনার হিসেবে পরিচিত ত্বক পরিষ্কার করার পণ্যগুলোয় অ্যালকোহল থাকে। একজন মুসলিম হিসেবে আমি অ্যালকোহল পান করি না, তবে এই অ্যালকোহলযুক্ত পণ্য কাউকে নেশাগ্রস্ত করে না, তাই এটি ত্বকে প্রয়োগ করায় কোনো ক্ষতি নেই।
রমজান মাসে ত্বকে ডবল ক্লিনজিং করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ডাবল ক্লিনজিং বলতে প্রথমে তেলজাতীয় ক্লিনজার বা মাইকেলার ওয়াটার ব্যবহার করে মুখ পরিষ্কার করা, তারপর ত্বক আরও গভীরভাবে পরিষ্কার করতে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়াকে বোঝায়।’
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :