চুল রং করাতে গেলে অনেক সময়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের প্রয়োজন পড়ে। রাসায়নিক দেওয়া রং চুলের কিছুটা অংশে মাখিয়ে তা ওই ফয়েলে মুড়িয়ে রাখা হয়, যাতে রং করা গুচ্ছের সঙ্গে সাধারণ চুল মিশে না যায়। কিন্তু চুলের আর্দ্রতা বা ময়েশ্চার ধরে রাখতেও যে এই বস্তুটি ব্যবহার করা যায়, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। বাড়িতে নিজে নিজে স্পা করার সময়ে ক্রিম মাখার পর অনেকেই মাথায় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল জড়িয়ে রাখেন। কিন্তু তাতে কি সত্যিই বাড়তি কোনও সুবিধা পাওয়া যায়?
যাদের কোঁকড়া বা রুক্ষ চুল, তাদের জন্য উষ্ণ রং ভালো। সিল্কি বা সোজা চুলের জন্য ঠান্ডা ধাচের রং। এ ছাড়া অনেকেই হয়তো প্রথমবার নিজ হাতে চুলে রং করবেন তাদের প্রথমে যা করতে হবে।
উষ্ণ রঙের মধ্যে পড়ে লাল, কমলা, তামা, সোনালি রং। ঠান্ডা ধাঁচের রং হলো বেইজ, নীল, বাদামি, ছাই। চুলে রং করার আগে কিছু উপকরণ রাখতে হবে হাতের কাছে। দুই বাক্স চুলের রং, পরার পুরনো কাপড়, দুই জোড়া দস্তানা (গ্লাভস), চিরুনি, কিছু কাগজ, ক্লিপ, কাচ বা প্লাস্টিকের বড় দুটি বাটি, ড্রাই ব্রাশ।
রং করার আগে মাথায় শ্যাম্পু করবেন না
মুখের ত্বকের মত মাথার ত্বকও সংবেদনশীল। বিশেষজ্ঞরা জানান, চুল রং করার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে চুলে শ্যাম্পু করা ঠিক নয়। এতে রঙিন চুলের ক্ষতি যেমন হয় তেমনই চুলের রং স্থায়ী হয় না। রং করার কিছুদিন পর উঠে যেতে শুরু করে। তাই সঠিক সময়ে চুলে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার লাগান।
কী রং লাগাবেন
একেক ধরনের রঙের জন্য একেক রকম পরিচর্যা জরুরী। ত্বকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখেই নিজের চুলের রং বেছে নিতে হবে।
তাপ থেকে রঙিন চুল রক্ষা করুন: কালার করার পর চুল ঠিক রাখতে সরাসরি সূর্যের আলো সরাসরি লাগতে দিবেন না। রঙিন চুল বুঝে বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করবেন।
রং পরীক্ষা করে নিন: চুলে লাগানোর আগে হেয়ার কালার ঠিকঠাক পরীক্ষা করে নেবেন। কেন? কারণ চুলে লাগানো সব কালার মাথার ত্বকের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
স্ট্রেটনার দিয়ে চুল সোজা করার সময়ে অনেকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করেন। তবে অতিরিক্ত তাপে কিন্তু চুলের কিউটিকল নষ্ট হতে পারে। মাথার ত্বক স্পর্শকাতর হলে বা কোনও ধাতু ব্যবহারে অ্যালার্জি থাকলে, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার না করাই ভাল।
রং করার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন?
* প্যাকেটের ওপর রঙিন চুলের যে ছবি থাকে আপনার চুলে ঠিক তেমন রং নাও আসতে পারে। কারণ চুলের ধরনের ওপর নির্ভর করে কেমন রং হবে।
চুল রং করা একটু কঠিন কাজ মনে হলেও আদতে কিন্তু অতটা কঠিন নয়। রং করার সময় মিশ্রণটি ঠিকমতো করতে হবে। এখন অনেক রং সরাসরিই ব্যবহার করা যায়, আলাদা করে মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হয় না। সেক্ষেত্রে খেয়াল করুন। প্যাকেটের ওপর লেখাটি ভালোভাবে পড়ে নিন।
* রং কেনার সময় অবশ্যই দুই বাক্স কিনতে হবে।
* রং কেনার পর পেছনে দেওয়া নির্দেশিকা পড়ে বুঝে নিতে হবে।
* কিছুটা ময়লা চুলে রং বসে দ্রুত। তাই চুল রঙিন করার দুই দিন আগে শ্যাম্পু করতে হবে।
* চুলে রং করার সময় এক জোড়া দস্তানা পরে নিন। অন্য জোড়া চুল ধোয়ার সময়। তা না হলে হাতে রং লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* ভিন্নধর্মী রং ব্যবহারের আগে কানের পেছনের পাশের চুলে একটু লাগিয়ে দেখে নেওয়া উচিত।
*চুলে পছন্দমতো রং না এলে দু-তিনবার রং ব্যবহার করবেন না। এতে চুলের ক্ষতি হয়।
*পছন্দমতো রং পেতে প্যাকেটে দেওয়া সময় মেনে চুলে রং রাখতে হবে।
*যারা চুলের সাদা গোড়া রং করতে চান, তারা অবশ্যই চুলের মাঝামাঝি থেকে নারকেল তেল ব্যবহার করবেন। এতে চুল ধোয়ার সময় বাকি চুলে রং বসবে না।
*রং করার আগে প্রথমে চুলকে চার ভাগে ভাগ করে নিন। কপাল ও কানের দিকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন এর পরের ধাপে।
*চুলের ওপরের দিক থেকে রং করে নিচের দিকে নামতে হবে।
*আগার চুলে শেষ তিন-চার মিনিট রং রাখা ভালো। রঙের সঙ্গে অবশ্যই একটু শ্যাম্পু মিশিয়ে নিতে হবে। যেহেতু চুলের গোড়ায় রং গাঢ় হয়, তাই এভাবে ব্যবহার করলে কিছুটা হালকা হবে।
* পুরো চুলে রং লাগানোর পর রঙের প্যাকেটে লেখা সময় পর্যন্ত রাখতে হবে, এরপর ধুতে হবে। তা না হলে শেষের দিকের চুলে ভালো রং আসবে না।
*রং করা শেষে চুল খোঁপা করা যাবে না।
*চুল ধোয়ার সময় শ্যাম্পু ব্যবহার না করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখুন রং যেন না থাকে।
* কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে চুলের রং শুকানোর পর আরও গাঢ় হয়ে যাবে।
চুলের রং কেনার আগে দেখে নিন কী কী উপাদান দিয়ে সেটি তৈরি। রাসায়নিক কোনও উপাদান থাকলে এড়িয়ে যান। ভেষজ উপাদান সমৃদ্ধ রং বেছে নিন। বিউটি পার্লারে সাধারণত অ্যামোনিয়াযুক্ত রং ব্যবহার করা হয়।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :