কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বলেছেন, কারাগার থেকে জামিন নিয়ে নানা গল্প রয়েছে। তবে এগুলো ঠিক নয়।
মঙ্গলবার কারা অধিদপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা বলেন।
আইজি প্রিজন আনিসুল হক বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) কারাগারে গেলে দেখতে পারবেন প্রতিটি কারাগারে দুটি বড় বড় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। একটি বোর্ডে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। আরেকটি থাক কারাগারের ভেতরে। এতে সুবিধা যেটা হচ্ছে, কার জামিন হয়েছে। এটা আসা মাত্র ডিসপ্লেতে দেখানো হয়। যে আত্মীয় নিতে আসছেন উনিও দেখতে পান আর যে বন্দি রয়েছেন তিনিও জানতে পারেন যে তার জামিন হয়েছে।
তিনি বলেন, এই যে জবাবদিহিতার কালচার তা চেষ্টা করছি আমাদের মত করে সাজানো।
একজনের নাম দিয়ে অন্যজন কারাগারে যাওয়ার উপায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এনটিএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ডেটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। একজন বন্দি যখন জেলখানায় প্রবেশ করে তখন তার ফিঙ্গার প্রিণ্ট, আইরিস ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এন্ট্রি করা হয়। সুতারাং আয়নাবাজি নিয়ে যে সিনেমা দেখেছি যে একজনের নামে আরেকজন এটা আর নেই।
কারাবন্দিদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ মনোযোগী জানিয়ে তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধির দিকেও আমরা মনোযোগী। প্রায় ৫ হাজার জনবল পাইপলাইনের রয়েছে রিক্রুট করার জন্য।
কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউ রাজশাহীতে নির্মাণ হয়েছে আর কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি কেরানীগঞ্জে বানানো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ডান্ডাবেড়ি কে দেয়? এটা পুলিশ দেয়। পুলিশ বন্দিকে যখন কারাগার থেকে বুঝে নেয়া তখন ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, লেখালেখি করা হয় জেলখানায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক না। পুলিশের রিক্রুইজেশন অনুযায়ী পরিয়ে দেওয়া হয় কারণ ডান্ডাবেড়ি থাকে কারাগারে।
আনিসুল হক বলেন, কয়েদী বন্দি থেকে হাজতি বন্দি কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে কয়েদি বন্দি প্রায় বিশ হাজারের মত থাকে আর হাজতি থাকে ৫৫ থেকে ৬০ হাজারের মত।
তিনি বলেন, মানবিকতার বিষয়ে বর্তমান সরকারের বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ কারা সংশোধনের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এই বন্দিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ান থেকে শুরু করে তাদেরকে সমাজে পুনঃর্বাসনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান আছে।
বন্দিদের খাদ্য তালিকে বেশি পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি ট্রেডে বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে; হস্ত শিল্প থেকে শুরু করে, তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের পক্ষে যা এফোর্ট করা সম্ভব।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, এই পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিকে এসব প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত বন্দি যখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যায়। তখন এই প্রশিক্ষণ থেকে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
তিনি বলেন, একটি হিসেবে আছে এ পর্যন্ত বন্দিদের দেড় কোটি টাকা তাদেরকে মজুরি হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ৫০ শতাংশ লাভ বন্দিদের দেওয়া হয় আর বাকি ৫০ শতাংশ কাঁচা মাল কেনার কাজে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, ৩৮টি কারাগারের কর্ম অধিদপ্তর থেকে সিটি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। সব কারাগারকে সেন্ট্রাল মনিটরিং এর আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, বন্দিদের গুদাম থেকে খাবার দেওয়া, বাজার ঢুকার পর্যন্ত মাছের সাইজ রান্না ঘরের আলোক চিত্র সবকিছু মনিটরিং করা হয়।
যদি বলা হয়, কাশিমপুর কারাগারে গত মাসের ওইদিন মাছ দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এটা প্রমাণ করতে আমার কোথাও যেতে হবে না। অধিদপ্তরে থেকে বের করতে পারব যে, ওইদিন খাবারে কি মেনু দেওয়া হয়েছিল।
এ সময় ক্র্যাব সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সহ-সভাপতি শাহীন আবুদল বারী, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজী, দফতর সম্পাদক কামাল হোসেন তালুকদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, ইসি সদস্য আলী আজম ও কালিমউল্ল্যাহ নয়ন উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :