- মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানবাধিকারের চালিকা শক্তি
- যারা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে তাদেরকে সরকার নজরদারিতে আনতে চায়
- সরকার কমিটেড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে
`বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস` আজ। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ, ত্যাগী সাংবাদিকদের স্বরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সন্মান জানানো হয় এই দিনে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মানবিক মূল্যবোধ তৈরি, উন্নয়ন, অগ্রগতি, বৈশ্বিক সেতু বন্ধন, দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র-সমাজ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা, রাজনৈতিক সহাবস্থান ও কৃষ্টি -কালচার রক্ষায় "মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।
মুক্ত গণমাধ্যমের, মুক্ত পথ চলার গতি অব্যাহত রাখতেই ৩ মে দিনটিকে " বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশের আলোকে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে `কে "বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত, তবে যারা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে তাদেরকে সরকার নজরদারিতে আনতে চায় বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ইউনেস্কো (ঢাকা অফিস ও রিজিওনাল অফিস-নিউ দিল্লী), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং আর্টিকেল নাইনটিনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো মনোভাব নেই সরকারের, সরকার কমিটেড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে। গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত। বরং আমাকেই অনেক সাংবাদিকরা নিবন্ধনহীন অনলাইনকে বন্ধ করার কথা বলে। গণমাধ্যম কর্মীদের তালিকা করতে বলে, কে কোথায় কাজ করে। আমরা কিন্তু সেটা করছি না। আমরা চাই একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সবাই আসুক।
মোহাম্মদ এ অরাফাত বলেন,
সুস্থ ধারার সাংবাদিকতা করতে কোনো বাধা নেই। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে যাতে আইনের অপব্যবহার না হয় সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। তথ্য উপাত্তের বিপরীতে ডকুমেন্টস থাকে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ নেই। গণমাধ্যমে স্বাধীনতা মানে কোনো নিজস্ব পারপাস সার্ভ করা নয়।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের গার্মেন্টন্স ও পাহাড়ি এলাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়। এটা সত্যি। সরকার সব সময় সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু সিস্টেমেটিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন যখন হয় আমরা সেটার বিরুদ্ধে। পরিবেশ বিপর্যয় কিংবা দুর্নীতি নিয়ে যেকোনো প্রতিবেদককে স্বাগত জানাই। আমি এখনো বলে যাচ্ছি, এই ধরনের সাংবাদিকতা রক্ষায় সঙ্গে আছি।
আইনের অপব্যবহার প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো আইনের যেন অপব্যবহার না হয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যে সব আইনের অপব্যবহারকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা রাখা উচিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যেমন আইন দরকার, তেমনি অপব্যবহার নিয়ে কথা বলা উচিত। শুধু গণমাধ্যম নয় যে কোনো আইনের অপব্যবহার নিয়ে গণমাধ্যমের কথা বলা উচিত। সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের বিষয়টি গুরুত্ব থাকা উচিত। কোনটা খবর সেটা আগে বুঝতে হবে। যে তথ্য দেশের বিরুদ্ধে যায়, এমন খবর হতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের অবস্থান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা যাবে তাদের বিরুদ্ধে।
আএসএফ র্যাংকিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন,
আমি এটা কথা বলেছি। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০২৩ সালের মে মাসে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে ভুল তথ্য আছে ।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওয়েবসাইটে ভুল, অর্ধসত্য ও অপর্যাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৬৩তম দেখানো হয়েছে। এটা নিয়ে আমি চিঠি লিখেছি, তারা ভুল তথ্য ডিলিট করেছে। কিন্তু এরপর র্যাংকিং ঠিক করা হয়নি।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে আজকের দিনে বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বে মুক্ত গণমাধ্যমের চিত্র কি? কেমন আছে গণমাধ্যম, গণমাধ্যম কর্মী ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা? গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সেখানে অবান্তর! গণমাধ্যমে সরকারি নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সুবিধাবাদী শ্রেণির আধিপত্য, দুর্নীতিবাজ, অবৈধ অর্থ ও ক্ষমতা লোভীদের অনুপ্রবেশ, কাল আইন, যখন গণমাধ্যমকে গিলে ফেলে, গণমাধ্যম তার আপন গতিপথ হারিয়ে ফেলে। যেই অবস্থান থেকে বর্তমান গণমাধ্যম কর্মীরা আজ চরম অবহেলা, প্রতিবন্ধকতা, হামলা, মামলা, নির্যাতন, ভয়-ভীতি, জীবন সংশয়, বিচার হীনতার শিকারে পরিণত। সচেতন মহলের মন্তব্য, গণমাধ্যমের দুরাবস্থার সার্বিক চিত্র হলো সাংবাদিকদের আর্থিক দৈন্যদশা, অনিশ্চিত বেতন কাঠামো, চাকুরি চ্যুতি, রাষ্ট্র যন্ত্রের অবহেলা, রাজনৈতিক বিভাজন, মতাদর্শিক দৈন্যতা, এসকল উপসর্গ। এক শেণির রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা সংবাদকর্মীদের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাসহ বিভাজন তৈরি করে ফায়দা লুটছে। এমনি জায়গা থেকে চারিদিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছে গণমাধ্যম কর্মীরা। তাদের কর্মের পরিবেশ নেই, নিরাপত্তা নেই, অর্থনৈতিক গ্যারান্টি নেই। সাংবাদিক হত্যার বিচার নেই। হামলা, মামলার প্রতিকার নেই। মত প্রকাশের নূন্যতম স্বাধীনতা নেই। দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ করতে গেলে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। সাংবাদিকদের হয়রানি করতে `ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন` নামে যে আইনটি করা হয়েছে তা থেকে প্রতিনিয়ত দুর্নীতিবাজদের হাতে মিথ্যে হয়রানির শিকার হচ্ছে গণমাধ্যম।
একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :