বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক বলেছেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির কথা জানিয়ে ১০ বার নোটিশ দিলেও ব্যবসায়ী সমিতি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। একই সঙ্গে আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় বঙ্গবাজারের মার্কেটটি ভাঙা বা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
ঘটনার আগে-পরের বিশদ বিবরণ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে হতে ঢাকা সিটি করপোরেশন বঙ্গবাজার মার্কেটের প্রায় ১ দশমিক ৬৯৭ একর জমি পায়। ১৯৯৫ সালে মার্কেট সমিতি নিজ খরচে ৩ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটটি নির্মাণ করে।
তিনি জানান, বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট ওই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। এখানে ১৪১টি গাড়ি পার্কিং ও ৪ হাজার ৪১৩টি দোকান ঘরের সংস্থান রেখে প্রতি ফ্লোরে ৬৭ হাজার ৩৩২ দশমিক ৫৩ বর্গফুট ধরে ১০ তলা ভিত্তি বিশিষ্ট স্টিল স্ট্রাকচারের বহুতল ভবন নির্মাণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ইজিপি প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে ২০১৯ সালের জুন থেকে শুরু করে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ করার লক্ষ্যে কার্যাদেশ (পাইলিংসহ ফাউন্ডেশন হতে প্লিন্থ লেভেল পর্যন্ত) দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে কর কর্মকর্তা কর্তৃক বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতিকে সংশ্লিষ্ট মার্কেটটি ৩০ দিনের মধ্যে খালি করে দেয়ার জন্য পত্র দেওয়া হয়। এরপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মার্কেট থেকে তিনটি মামলা করা হয় এবং পত্রের কার্যকারিতা হাইকোর্ট স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়, যা বার বার সময় বাড়িয়ে অদ্যাবধি পর্যন্ত বহাল আছে।
বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী জানান, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটটি দীর্ঘদিনের পুরনো টিনের-কাঠের তৈরি বিধায় এটি জরাজীর্ণ অবস্থা, ব্যবহারের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ এবং যে কোনো সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে বিভিন্ন সময় মার্কেট সমিতিকে মোট ছয়বার পত্র মারফত অবহিত এবং মার্কেট খালি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান খালি না করে, করপোরেশনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলাগুলোর প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ থাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে মার্কেটটি ভাঙা বা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ২০১৯ সালের এপ্রিলে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে মার্কেটে সতর্কতামূলক ব্যানার ঝুলিয়ে সতর্ক করে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কে বারবার নোটিশ প্রদান করে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঝুঁকির বিষয়টি অবহিত করা হলেও তারা এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তিনি জানান, তাদের সঙ্গে অসংখ্যবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে বৈঠক হয়েছিল। মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে মতবিনিময় করে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। সর্বমোট ১০ বার নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল।
প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের পর দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বিত বিষয় ও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন।
তিনি জানান, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এ সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনা প্রদানের কারণে সকলের প্রচেষ্টায় আরও ভয়াবহতা থেকে সকলে রক্ষা পেয়েছে। উৎসুক জনতার ভিড়, পানির অপর্যাপ্ততা, অধিক বাতাস/তৈরি পোশাক/মালামাল গাদাগাদি করে স্টোর করা, কাপড়ের গোডাউন, পলিথিন সামগ্রী, টিন ও কাঠের সহজ দাহ্যদ্বারা তৈরি তিন তলা মার্কেট, কাঠের পাটাতন ইত্যাদি কারণে আগুন নির্বাপনে সময় বেশি লাগলেও সর্বাত্মক আন্তরিকতায় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
একুশে সংবাদ.কম/এ.ট.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :