ছবি কথা বলে। ছবিটি ওয়াশিংটনে। সেখানে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের হাতে পদ্মা সেতুর ছবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মুহূর্তেই এই ছবিটি বাংলাদেশের মানুষকে করেছ উল্লসিত, আবেগাপ্লুত এবং শিহরিত। বাঙ্গালী যে বীরের জাতি, মাথা নত করে না তা আবার প্রমান করেছেন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাংক ৫টি প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ২.২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুদান দিয়েছেন। এই ঋণ অনুদান ছাড়াও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করেছে। অথচ ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সেখান থেকে এই সম্পর্কের ইউটার্ণ বাংলাদেশের জন্য যেমন মর্যাদার, তেমনি বিশ্বব্যাংকের জন্য ভুল ভাঙ্গার।
প্রধানমন্ত্রী এখন তিন দেশ সফরে বিদেশ আছেন। জাপান সফর শেষ করে অবস্থান করছেন ওয়াশিংটনে। সেখানেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়।
বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক এবং এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেখানে গেছেন তিনি।
এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে তিনি আদালতে যান। আদালত সরকারের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখে। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস দমে থাকেননি। তিনি নালিশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। বিশ্বব্যাংকে চিঠি দেন যে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য। বিশ্বব্যাংক এই চিঠি আমলে নেয় ভিন্ন কৌশলে। পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে অহেতুক দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে। যে সেতুর কার্যক্রমই শুরু হয়নি, টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, সেই সেতুতে কিভাবে দুর্নীতি হয়। এমন প্রশ্ন থাকলেও বিশ্বব্যাংক অনড় থাকে এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
শেখ হাসিনা যখন ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয় হয়ে সরকার গঠন করেন সেই সময় তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সে সময় গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু তার বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে অবসরে পাঠানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের পর সরকারের বিভিন্ন মহল নানা রকম দেন দরবার ও তদবির চালায়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত ড. গওহর রিজভীকে সাথে নিয়ে বিশ্বব্যাংকে যান এবং সেখানে দেন দরবার হয়। অবশেষে অর্থমন্ত্রী রাজি হন যে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে নির্মোহ তদন্ত করা হবে। এই তদন্তের মাধ্যমে যারা দুর্নীতির চেষ্টা করেছে বা দুর্নীতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন অর্থমন্ত্রী। দেশে ফিরে এসে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য কমিশনারদের একে একে ডাকেন এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থ পাওয়ার জন্য যেকোনো পর্যায়ে নতজানু হওয়ার পরামর্শ দেন। অন্যসব কমিশনারা এবং দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ প্রস্তাব মেনে নিলেও একজন বাগ সাজেন।
তিনি হলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, আইনের বাইরে তিনি যেতে পারবেন না। একজন বিচারক হিসেবে আইনই তার পথপ্রদর্শক, আলোকবর্তিকা। আর এ সময় দুর্নীতির তদন্তে বিশ্ব ব্যাংকের যে প্রতিনিধি দল আসে তাদের সাথে বৈঠকে তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশনার সাহাবুদ্দিন দুর্নীতির আইনের কোনো ধারায় পদ্মা সেতুতে অনিয়ম হয়েছে তা জানতে চান।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের ব্যাখ্যা দেন। আর এর ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন অকারণে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করা গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত থাকে। এতে বিশ্বব্যাংক নাখোশ হয় এবং পদ্মা সেতুতে অর্থ ঋণ দানের প্রস্তাব থেকে সরে আসেন। আর এর ফলে পদ্মা সেতু অনিশ্চিত হয়। কিন্তু সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় এক অসাধারণ অনন্য সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন যে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করা হবে। এই চেতনার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর এক দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার অভিযাত্রা শুরু করে।
অবশেষে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে এবং পদ্মা সেতুতে যান চলাচল করছে। বিশ্বব্যাংকও বুঝতে পেরেছে যে পদ্মাসেতু দুর্নীতি হয়নি। শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বব্যাংকের সাথে বৈরিতা করেননি বরং বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতুর ছবি উপহার দিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিলেন।
একদিকে যেমন তিনি বাংলাদেশের সম্মান এবং আত্মমর্যাদাকে সমুন্নত রাখলেন, অন্যদিকে তিনি স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অংশীদার বিশ্বব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক রাখলেন। বিশ্বব্যাংক নিশ্চয়ই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এ কারণেই তারা আগামীতে বাংলাদেশকে আরও ব্যাপক বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে।
একুশে সংবাদ/জ.র.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :