রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার সময় শেষ হয়।
শেষদিনে প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শহরে মিছিল করেছেন। বিশেষ করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা মিছিল করে নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। বুধবার (২১ জুন) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইভিএম নিয়ে আপত্তি রয়েছে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের। ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হবে না আশঙ্কা করে ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রে। তবে কেন্দ্র থেকে সোমবার পর্যন্ত তাকে কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তাই শেষদিনে মনের বিরুদ্ধে টুকটাক প্রচারণা চালিয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকের এই প্রার্থী।
এদিকে, বিকেলে মিছিল বের করে নৌকার পক্ষে জনজোয়ার দেখাতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিকেলে নগরীর জয়বাংলা চত্ত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়। আরেক মেয়রপ্রার্থী জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার এদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর জিন্নানগর থেকে আমচত্ত্বর পর্যন্ত এলাকায় গণসংযোগ করেন। এই নির্বাচন নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। ভোটের পরিবেশ তিনি শান্তিপূর্ণ দেখছেন বলেই জানিয়েছেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে না অভিযোগ তুলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুরশিদ আলম ইতোমধ্যে নির্বাচন বয়কট করেছেন।
এখন সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী ছাড়াও ১১২ জন কাউন্সিলর ও ৪৬ জন সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য ২৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে। এছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য সংরক্ষিত ১০টি নারী আসনেও প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছিল। শেষ দিনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় মিছিল বের করেছেন।
গত ২ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়েছিল। এবার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে তিনটি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ১৬২টি। ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টিকেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটকেন্দ্রগুলো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার অধীনে থাকবে। ঢাকা থেকেই কমিশনের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। কোথাও বিশৃঙ্খলা দেখলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার পাশাপাশি ১০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রে থাকবেন মোট ৩ হাজার ৬১৪ জন কর্মকর্তা। নির্বাচনের দিন ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে থাকবেন। এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এর পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে থাকবে আনসার ও পুলিশ। আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে র্যাব ও বিজিবি।
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাইন্সে পুলিশ এবং র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে র্যাবের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ভোটের মাঠে বেরিয়ে পড়েন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, ভোটকেন্দ্র এবং শহরের নিরাপত্তায় নগরজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবির রাজশাহীর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান জানান, ভোটের দিন ১২ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে। প্রতি প্লাটুনে থাকবেন ২০ জন করে বিজিবি সদস্য। আর র্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, দায়িত্বে থাকবে ২৫০ র্যাব সদস্য।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত মেয়র পদের প্রার্থীদের মধ্যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার চলাকালে টুকটাক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। সার্বিক মূল্যায়নে ভোটের পরিবেশ খুব শান্তিপূর্ণ। এভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। এই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৬ জন। এই নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের একজন নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :