ডোপ টেস্ট সংক্রান্ত আইন ২০১৮ সালে হলেও চূড়ান্ত হয়নি বিধিমালা। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে আটটি বিভাগে এবং ১২টি জেলায় মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহে বৈঠকে করেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর তরফে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট সব ক্ষেত্রে একার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
সভায় মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ তথা ডোপ টেস্টের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়। এছাড়া প্রণীত নীতিমালার ভিত্তিতে আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত কার্যক্রমগুলো অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরক্ষা সেবা বিভাগের পরিচালন বাজেটের আওতায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চিকিৎসা ও পুনর্বাবসন শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ২৪ (৪) ধারায় মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত করার জন্য ডোপ টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় এবং বিআরটিএ থেকে গাড়ি চালকদের নতুন লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। তাই এ কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. মশিউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পিইসির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডোপ টেস্টের কার্যক্রম পরিচালন বাজেটের আওতায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
একই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিম বলেন, রাজস্ব বাজেট থেকে ডোপ টেস্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল জনবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে প্রস্তাব পেলে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আবদুর রউপ মিয়াও বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকাসক্ত শনাক্তকরণের জন্য ডোপ টেস্ট কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।
মাদকদ্রব্য ও মামলা দায়েরের বিষয়টি একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৪৯ হাজার ৪৯১টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৬১ হাজার ৩৬৪ জনকে। এসব ঘটনায় উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে অফিয়াম, হেরোইন, কোকেইন, ফেন্সিডিল বা কোডিন, গাঁজা, ইনজেকটিং ড্রাগ বা অ্যাম্পুল, এটিএস বা ইয়াবা।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও ডোপটেস্টের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে। ২০১৮ সালে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার, সরকারি যেকোনও চাকরিতে যোগদানের আগে অবশ্যই ডোপ টেস্ট করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত ডোপ টেস্ট করার সক্ষমতা সব হাসপাতালেরও নেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, তারা ডোপ টেস্ট বিধিমালা প্রণয়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে একটি খসড়া পাঠিয়েছেন। সুরক্ষা বিভাগ সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেই খসড়া বিধিমালাটি সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়। ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর সংশোধিত বিধিমালাটি আবার সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলাম।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :