গেল তিনমাসে বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত পথে ভারতগামী যাত্রী কমেছে ১ লাখ ৪২ হাজার। ভ্রমণ কর বৃদ্ধি, ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রতা, বাংলাদেশ-ভারত দুই চেকপোস্টে নানা হয়রানি, কারণে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, শারীরিক নির্যাতন এবং টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে যাত্রীদের আগে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া ইত্যাদি সমস্যার কারণে ভারতে যাবার যাত্রী সংখ্যা কমেছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা ও ভ্রমণের জন্য বেশির ভাগ বাংলাদেশী যাত্রী ভারতে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৮ জন যাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছে। ভিসাপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানি ও ভ্রমণ কর বৃদ্ধির পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৩৯ জন যাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছে। একই সময়ে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৫৯ জন।
বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা সুবিধা দিতে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশের সই করা সমঝোতা চুক্তি বিদ্যমান। সেই চুক্তি অনুযায়ী ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশীদের পাঁচ বছর মেয়াদি ভিসা পাওয়ার কথা। আর ৬৫ বছরের কম বয়সী ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া হতো এক বছর মেয়াদি। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের জন্য তিন-পাঁচ বছরের ভিসা দেয়া হতো। আগে আবেদন করলে ১০-১৫ দিনের মধ্য ভিসা পাওয়া গেলেও এখন তা দুই-তিন মাসেও সম্ভব হচ্ছে না। আর ভিসা দিলেও তার মেয়াদ থাকছে তিন-ছয় মাস।
ভ্রমণ কর চলতি বাজেটে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করায় যাত্রীদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। এজন্য ইমিগ্রেশনে যাত্রী সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। সাধারণ যাত্রীদেরও ব্যাগেজ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও ছাড় দিচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এমনকি খাদ্যতালিকার চকলেট, শন পাপড়ি, বিস্কুট, এক কেজি জিরা, চিনি পর্যন্ত আটক করে মেমো দিয়ে দিচ্ছে যাত্রীদের হাতে।
একই সঙ্গে দুই দেশের ইমিগ্রেশনে নানাভাবে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া চেকপোস্টে বিএসএফ ও বেনাপোল চেকপোস্টে বিজিবির দুই দফা তল্লাশির কারণে যাত্রী কমে গেছে অনেকাংশে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে।
একাধিক ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় তারা ভোর থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকেন। তবে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে বিকল্প পথে টার্মিনাল ভবনের ভেতরে সুযোগ মিলছে অনেক যাত্রীর।
ঢাকা থেকে আসা যাত্রী নমিতা সরকার বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আগে যেভাবে লাগেজ সুবিধা পেতাম এখন তা পাচ্ছি না। বর্তমানে যেভাবে ব্যাগ তল্লাশি করছে তাতে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা ও ল্যান্ডপোর্ট চার্জ ৫০ টাকা দিয়ে ভারতে ভ্রমণ করেছি। এখন ভ্রমণ কর ১ হাজার টাকা করায় আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া উচিত এবং ভ্রমণ কর উঠিয়ে দেয়া উচিত। ৫০০ টাকার ভ্রমণ কর এক লাফে ১ হাজার টাকা করায় আমার মতো অনেক ট্যুরিস্টের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
সুব্রত সাহা নামের একজন যাত্রী বলেন, আগে যে পরিমাণ যাত্রী যাতায়াত করত এখন তেমন নেই। আগে যেভাবে লাগেজ সুবিধা পেতাম বর্তমানে তা নেই। বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এসব সমস্যার কোনো সমাধান না হলে আগামীতে আরো যাত্রী কমে আসবে।
একরামুল হক নামের এক যাত্রী বলেন, আমার বাবা ক্যান্সার রোগী। ভারতে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে বাসার জন্য কয়েকটি মালামাল এনেছিলাম। চেকপোস্ট কাস্টমস অফিসাররা তা সিজ করে একটি মেমো হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ যাত্রীরা ব্যাগেজ রুলের যে সুবিধা পাওয়ার কথা সেটা কাস্টমস দিচ্ছে না।
খাইরুল আনোয়ারুল নামে এক যাত্রী বলেন, আমরা যারা ভারতের ভ্রমণের জন্য ভিসা নিতে যাচ্ছি তাদের পাসপোর্ট জমা দেয়ার এক-দুই মাস পর সিরিয়াল পাচ্ছি। আর ভিসা পেতে লাগছে দেড়-দুই মাস। সব মিলিয়ে ভিসা পেতে তিন-চার মাস সময় লেগে যাচ্ছে। এতটা সময় যদি ভিসা পেতে হয় তাহলে মানুষ কীভাবে যাওয়া-আসা করবে। এ কারণে এখন বর্ডারে লোকও কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. এহসিন আলী বলেন, যে পরিমাণ যাত্রী বেনাপোল দিয়ে যাতায়াত করে, ভ্রমণ কর বৃদ্ধির পর আগস্টের প্রথম থেকে এর সংখ্যা কমে গেছে। ফলে সরকারের ভ্রমণ করের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব নয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আব্দুল জলিল বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন আগে ছয়-সাত হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করত। সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রীসংখ্যা অনেক কমে গেছে।
একুশে সংবাদ/আ.হ.ভূ/না.স
আপনার মতামত লিখুন :