ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে উন্নয়নের বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ শক্তি বনাম পশ্চাদপদ বাংলাদেশ শক্তির লড়াই। এই লড়াই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সাথে স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত শক্তিরও লড়াই। ২০২১ সালে প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রা আমরা শুরু করেছি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এই সংগ্রাম এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের চলমান সংগ্রাম এগিয়ে নিতে ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মতো স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে আবারও নির্বাচিত করতে হবে।
মন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার কক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা : শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন : সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নিকট প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি , সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ খান মেনন, এমপি , জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল হক ইনু, এমপি, মানবাধিকার নেত্রী এ্যারোমা দত্ত এমপি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল, বাংলাদেশ-এর প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বক্তৃতা করেন। সভা সঞ্চালনা করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আইটি সেলের সভাপতি শহীদ সন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর।
ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারা ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে বাংলাদেশ পরিণত হয় পশ্চাদপদ একটি রাষ্ট্রে। এমন পরিস্থিতিতে ’৯৬ সালে রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশকে অতীতের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে সামনের দিকে পরিচালিত করেন। কিন্তু ২০০১ সালে সেই অগ্রযাত্রা পুনরায় থমকে দাঁড়ায় এবং ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিভীষিকাময় একটি সময় পার করে। সেই সময়টি যেন বাংলাদেশের আর না আসে সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’ কম্পিউটারে বাংলাভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গত পৌনে পনের বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ। উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সফলতার এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তর একমাত্র শেখ হাসিনার মত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব।‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনমত গঠনে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করেন এবং ২০২৪ সালে আমরা তাকে পুনরায় নির্বাচিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যে কোনো মূল্যে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। কেননা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা পেশি ও অর্থশক্তি দিয়ে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্ট করবে। তরুণদের প্রতি আমার আহ্বান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির চক্রান্তে কোনভাবেই পা বাড়াবেন না এবং অনলাইন ও অফলাইনে তাদের প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তারাই বিদেশিদের সঙ্গে নিয়ে আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। কারণ ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি বিএনপি-জামায়াত কীভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন করেছে। আসন্ন নির্বাচনে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার যেন না হয় সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল হক ইনু, এমপি বলেন, ‘সংবিধানের ধারা রক্ষা করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। কাউকে নির্বাচনে আনার জন্য কারো মাথাব্যথা নেই, এটা কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও নয়। নির্বাচনে কতজন আসলো বা কতজন মানুষ উপস্থিত হলো সেটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি নয়। সুতরাং এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং যথাসময়ে ভোট করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। মানুষ যাতে নির্বাচন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে সেই পরিস্থিতি তৈরি করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী এ্যারোমা দত্ত এমপি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সকল বিরোধী শক্তি মিলে আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা তাদের ষড়যন্ত্রে বিদেশিদের যুক্ত করে নিজেদের অসহায়ত্বই প্রকাশ করছে না বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেও খর্ব করছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে সভাপতির ভাষণে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :