AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের সক্ষমতার স্মারক ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’


Ekushey Sangbad
আমিনুল হক ভূইয়া
০২:২৩ এএম, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩
বাংলাদেশের সক্ষমতার স্মারক ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর থাকার পরও কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্তে  ঢিলছোঁড়া দূরত্বে থাকা আনোয়ারা উপজেলা আধুনিক নগর ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন।  ২০০৯ সালে চীনের অন্যতম বৃহত্তম নগরী সাংহাইতে টানেল উদ্বোধনের পর অপর প্রান্তে নতুন নগরী তৈরি হয়েছিল। সাংহাই নগরীর অনুন্নত অপর প্রান্ত দ্রুতই বিকশিত হয়ে নতুন শহর তৈরি হয়। তারপর থেকে সারা বিশ্বে সাংহাই নগরীর ট্রেডমার্ক হয়ে উঠে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ নামটি।  চট্টগ্রাম সেই সাংহাই নগরীর আদলেই ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসাবে গড়ে ওঠবে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই পথে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হাব চট্টগ্রাম। প্রতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ টানেল চালুর মধ্য দিয়ে অপর প্রান্তে আনোয়ারা চেহারা অমূল পরিবর্তন হবে। যানজটের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চল আনোয়ারা দ্রুত অর্থনৈতিক এলাকা হিসাবে বিকশিত হবে।

আজ শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের পর এই পথ ব্যবহার করেই আনোয়ারায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি জনসমাবেশে যোগ দেবেন। টানেল উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে পতেঙ্গা প্রান্ত ও আনোয়ারা বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

টানেল ব্যবহার করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৪০ কিলোমিটার। সময় কমবে এক ঘণ্টা। দুটি টিউবের চার লেনের সড়কের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে পাঁচ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে যাওয়া যাবে আনোয়ারায়। উদ্বোধনের পরদিন তথা রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে সর্বসাধারণের যান চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়া হবে।  চট্টগ্রামের নতুন শহর গড়ে উঠবে নদীর অপর প্রান্তেও। চট্টগ্রাম নগরীর অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক আকার হবে দ্বিগুণ।

বঙ্গবন্ধু টানেলের পাশেই পতেঙ্গায় রয়েছে, বে-টার্মিনাল আর সুপ্রসস্ত মেরিন ড্রাইভ রোড। সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে বে-টার্মিনাল দীর্ঘ স্থাপনায় পরিণত হচ্ছে। এই টার্মিনাল ব্যবহার করে মিরসরাইয়ে গড়ে ওঠা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক জোনের পণ্য ওঠানামা করবে। আনেয়ারা শিল্পঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই চলে যাবে দেশের নানা প্রান্তে। চট্টগ্রাম শহর হবে যানজট মুক্ত। এই টানেল দেশজ উন্নয়নে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখবে প্রত্যাশা অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্বদের।  

প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট পতেঙ্গা প্রান্তে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটিতে। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেল যুক্ত করবে কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি আর অপর প্রান্তের চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল)।  সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আনোয়ারা প্রান্তে ব্রিজ ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৭২৭ মিটার। অ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। টোল প্লাজার দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ৬০০ বর্গমিটার। এ ছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার উড়াল সড়ক রয়েছে।

টানেলে আন্ডার পাসের সংখ্যা আনোয়ারা প্রান্তে পাঁচটি ও পতেঙ্গা প্রান্তে একটি আর কালভার্টের সংখ্যা ১২টি। সার্ভিস এলাকায় ৩০টি বাংলো, একটি ভিআইপি বাংলোসহ মোটেল মেস, হেলথ সেন্টার, কনভেনশন সেন্টার, জাদুঘর, সুইমিংপুল, ব্রিজ, মসজিদ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা থাকবে।  টানেলের দুপাশে দুটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পুলিশের ক্যাম্প নির্মাণ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক কার্যক্রম এখনও বাকি। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য স্ক্যান মেশিন বসানো হচ্ছে।

সেতু বিভাগ থেকে জানা যায়, দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এ দুই টিউব তিনটি সংযোগ পথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বিপদের সময় অন্য টিউবে গমনের জন্য এ ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহার হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার ও ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।

নদীর তলদেশের এ প্রকল্পের নিরাপত্তা দিতে দুই প্রান্তে দুটি করে চারটি স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ চারটি স্ক্যানারের জন্য ব্যয় হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেল চালুর আগেই দুটি স্ক্যানার বসানো হয়েছে। বাকি দুটি স্ক্যানার আগামী মাসে দেশে আসবে। সেটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পে স্থাপন করা হবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্রিটেন থেকে আনা স্ক্যানারগুলো টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। ১৩ টন ওজনের প্রতিটি স্ক্যানার প্রায় ৫০ মিটার লম্বা ও প্রশস্ততা ১০ মিটার। সময় লাগবে পরিবহনপ্রতি দুই মিনিট।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা হয়।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।

চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে এ প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি টানেলটি নির্মাণ করছে।

একুশে সংবাদ/এএইচবি/এসআর

Link copied!