সময় সাশ্রয়ী পরিবহন সেবার নাম রেল। জনবান্ধব রেলপরিষেবাকে ১১২টি জেলায় যুক্ত করতে কাজ করছে হাসিনা সরকার। বর্তমানে ৪৮টি জেলায় রেলপরিষেবা চালু হয়েছে। আরও ৬৪ জেলাকে রেলপরিষেবার জুড় কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ, স্টেশন বাড়ছে। শেখ হাসিনার হাত ধরে এমন সব এলাকায় রেলপরিষেবা পৌছে গিয়েছে, যা কোন দিন মানুষ ভাবতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তা যেমন দেশের মানুষ ভাবতে পারেনি, তেমনি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে এমন কথাও বহু মানুষ ভাবতে পারিনি।
শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় আজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তিই কেবল আসেনি, বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো উন্নত বাংলাদেশ গঠন করেছেন শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ এশিয়া প্রথম টানেল এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা-কক্সবাজার রেলসংযোগ, ঢাকা-ভাঙ্গা রেলসংযোগ, ডুয়েগেজ রেলপথ নির্মাণ, আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক রেলসংযোগ, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃৎ সার কারখানা, আন্তর্জাতিক মানের লেক নির্মাণ ইত্যাদি তাক লাগানো মেগা প্রকল্প বাংলাদেশকে বিশে^ অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের রেলযোগাযোগকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে আলাদা রেলমন্ত্রণালয় করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। তাতে গতিশীল হচ্ছে রেল। পরিধি বাড়ছে রেলের। রেলকে জনবান্ধব করতে সকল রকমের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দেশেরে ৬৪ জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানের কাজ জোর কদমে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের অক্টোবরের শুরুতেও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় ছিল দেশের ৪৩টি জেলা। গত দুই মাসে কক্সবাজারসহ আরও পাঁচটি নতুন জেলাকে নেটওয়ার্কের সঙ্গে জুড়তে সক্ষম হয়েছে রেলওয়ে। এমন সম্ভবনা সঙ্গী বুধবার (১৫ নভেম্বর) পালিত হচ্ছে রেল দিবস।
রেল ভবন সূত্রের খবর, বর্তমান সরকার জনস্বার্থে রেলসেবার মান বাড়াতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭৯৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ৮৯৭ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ, ৮৪৬ কিলোমিটার বিদ্যমান রেললাইন পুনর্বাসনের কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেটসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইসিডি নির্মাণ, ওয়ার্কশপ নির্মাণ, ১৬০টি নতুন লোকোমোটিভ, ১ হাজার ৭০৪টি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ২২২টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, নতুন আইসিডি নির্মাণসহ রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
রেলভবন জানায়, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত রেলপথ ছিল দেশের ৪৩টি জেলায়। ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয় আরও তিন জেলা মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর।
গত ১ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেলপথ উদ্বোধনের মধ্যে ৪৭তম জেলা হিসেবে পুনরায় যুক্ত হয়েছে বাগেরহাট। এর আগে খুলনা-বাগেরহাট রেলপথ বন্ধ হলে রেল সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এ জেলা। সর্বশেষ ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের উদ্বোধনের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সংযুক্ত হয় রেল নেটওয়ার্কে।
সারাদেশকে রেলের নেটওয়ার্কের আওতায় জুড়তে ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৬ জেলাকেও রেলপথের আওতায় আনতে চায় সরকার।
জেলাগুলো হলোর রয়েছে, নড়াইল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, মাগুরা, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, শেরপুর, মানিকগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর। এর বাইরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি।
রেল সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে পদ্মা রেল সংযোগের পুরো প্রকল্পের উদ্বোধন হলে যুক্ত হবে নড়াইল ও মাগুরা জেলা। তারপর ধীরে ধীরে রেলওয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাকি জেলাগুলো। এসব জেলাকে রেলপথে সংযুক্ত কাজ চলছে।
২০৪৫ সালের মধ্যে লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি রেল সংযোগের আওতায় আসবে
পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোও রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, বর্তমানে যেসব প্রকল্পের সমীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে, সেসব প্রকল্পের আওতায় রেলপথ নির্মিত হলে আটটি জেলা রেল সংযোগের আওতায় আসবে। এই আট জেলার মধ্যে সাতক্ষীরা, বরিশাল, রাঙামাটি, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও মেহেরপুর।
রেলওয়ের বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান সম্পন্ন হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে বাকি চার জেলা লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি রেল সংযোগের আওতায় আসবে। তখন দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা ছাড়া বাকি সব জেলা দেশের রেল সংযোগে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
রেল যোগাযোগব্যবস্থাকে জনবান্ধব করতে সরকার ৩০ বছর (২০১৬-২০৪৫) মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ছয়টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই মাস্টারপ্ল্যানে ২৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে, দেশের সব জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :