মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ-শমসেরনগর আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘনার শিকার হয়ে প্রায়ই নানা ধরণের বন্য প্রাণী দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়।
বন্য প্রাণীরা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত রাস্তা ফাঁকা পেলেই ঝোপ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আঞ্চলিক সড়ক পার হতে গিয়ে বিভিন্ন গণপরিবহনের চাকায় পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর এসব প্রাণীদের সরাতে সওজ, বন বিভাগ, প্রাণী সম্পদের কোন কর্মকর্তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। বরং সেই প্রাণীদের দেহাবশেষ রাস্তায় পড়ে থেকে চরম দুর্গন্ধ ছড়ায়।
গত দুইদিন আগে সড়ক পারাপার হতে গিয়ে ভারি যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে একটি শিয়াল জাতীয় একটি প্রাণির নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক যাত্রীসহ পথচারীরা। কেউ কেউ নাখ মুখ বন্ধ রেখে আবার কেউ মাস্ক পড়ে এই স্থানটি পার হচ্ছেন। কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত এই পচা শিয়ালটি রাস্তা থেকে সরাতে সওজ, বন বিভাগ, পৌরসভা কিংবা কোনো চালক কেউ এগিয়ে আসেনি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে এগিয়ে আসলেন কমলগঞ্জ একতা সমাজকল্যাণ পরিষদের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবি তরুণ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা এক ভিডিওতে ভেসে ওঠে ৩ তরুণের মহতি কার্যক্রমের চিত্র। হিফজুর রহমান ফাহাদ নামের এক তরুণ এই ভিডিওটি তার ফেসবুক আইডিতে আপলোড করে স্ট্যাটাসের ক্যাপশনে লেখেন, `মানুষ মানুষের জন্য। গতকাল রাত কোন বড় গাড়ির চাপায় পৃষ্ট হয়ে একটি শেয়ালের অস্বস্তিকর মরদেহ পড়েছিলো উপজেলা-শমসেরনগর রোডে। পচা দুর্গন্ধে পথচারী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়তে অনেক কষ্ট হচ্ছিল দেখে আমরা একতা সমাজকল্যান পরিষদ কমলগঞ্জের কয়েকজন মিলে সে দুর্গন্ধযুক্ত পচা প্রাণীটি রাস্তা থেকে সরিয়ে মাটির নিচে পুতে রাখি`।
পোস্ট দেখে মুঠোফোনে আলাপ করি তরুণ সংগঠনের সভাপতি হিফজুর রহমান ফাহাদের সাথে। তিনি জানালেন, গতকাল বা পরশু রাতে হয়তো রাস্তা পারাপারের সময় ভারি কোনো যানবাহনের চাপায় শিয়ালটিকে পিষ্ট হয়ে মরে রাস্তায় পড়ে থাকে। এই রাস্তা দিয়ে কত মানুষ আসা যাওয়া করে, মরা-পচা প্রাণীর দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীসহ চালক যাত্রীরা। বিশেষ করে যখন সকালে দেখলাম স্কুল কলেজের শত শত ছাত্রছাত্রীরা নাকমুখ বন্ধ করে বহু কষ্ট করে এই জায়গাটুকু পার হয়েছেন, তাই কারো অপেক্ষা না করে আমি আমার একতা সমাজকল্যাণ পরিষদের অর্থ সম্পাদক মুবিনুর রহমান নাহিদ ও নাজমুল ভাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে কোদাল আর বস্তা সংগ্রহ করে মরা প্রাণীটির ক্ষতবিক্ষত দেহটি রাস্তা থেকে সরিয়ে মাটিতে পুতে রাখি। মাদরাসা ছাত্র হাফেজ ফাহাদ আরও বলেন, ইসলামে শুধু মানুষ নয় প্রাণীরও যাতে কষ্ট না হয় সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে। আর রাস্তায় চলাচল করতে পথচারীর কষ্ট হয় এমন জিনিস রাস্তা থেকে সরানোও অনেক সওয়াবের সাজ। তাই ঈমানের তাকিদেই আমি এই কাজটুকু করেছি। তরুণদের এমন মহতি কাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। পোস্ট এর কমেন্টবক্সে বুরহান জিয়া লেখেন, `মাশাআল্লাহ, ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন।
বদরুল আমিন লেখেন, আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। জুবেল আহমদ লেখেন, দেখে খুব ভালো লাগলো ভাই।
সায়মা তাহসিন সাবিহা লেখেন,পথচারীর কষ্ট হয় এমন জিনিস রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা ঈমানের অংশ।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমানের সত্তরের বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। (ইবন মাজাহ : ৫৭)।
সুতরাং আমার ভাই যে কাজটি করেছে সেটা অবশ্যই ইবাদের অংশ। আল্লাহ ছোট ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
মুহিন মিয়া লেখেন, জাযাকাল্লাহ, প্রিয় ভাইদেরকে আল্লাহ যেনো উত্তম প্রতিদান দেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :