শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে হুমকি বোধ করছেন বলে যে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেটার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মান উন্নয়ন নিয়ে নতুন একটি স্মারকপত্রে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্মারকপত্র প্রকাশের পর এ নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তার বক্তব্যে বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের বিষয়টি উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা পরবর্তী আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে জিজ্ঞেস করব। যদি আমার স্মৃতি ভুল না করে থাকে, তাহলে কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন, ২০১০ সালে। তবে তিনি একা না, একাধিক শ্রমিক নেতা চাকরি করারত অবস্থায় আন্দোলন করায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে তাদের মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, তৈরি পোশাক খাতে যে অরাজকতা হয়, সেটা খুবই টেম্পরারি নেচারের (অস্থায়ী প্রকৃতির)। হঠাৎ করেই এটা শেষ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পরে পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন কারখানাগুলোকে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে, তখন কল্পনা আক্তারসহ আরও দুয়েকজন মিলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই গ্রেফতার হয়েছিলেন, যোগ করেন তিনি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, কাজেই কল্পনা আক্তার যেটা বলেছেন যে তিনি আমাদের বা অন্য কারও কাছ থেকে হুমকির শিকার হয়েছেন, এটার ব্যাখ্যা আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব। কল্পনা আক্তার খুবই সফলতার সাথে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ড কিংবা আপনারা যদি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এই কথা বলেছেন কিনা, বলে থাকলে কীসের ভিত্তিতে বলেছেন, তাকে এটা জিজ্ঞেস করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিন্তু তিনি যে হুমকির কথা বলেছেন, সেটা অতীতে বাংলাদেশে কাউকে বলেননি। অবশ্যই এটার সত্যতা কতটুকু, সেটা আমরা জানতে চাইব। পাশাপাশি একটি বিষয় পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যে বৈঠকে এই কথা বলেছেন, সেটা হলো এশিয়া-প্যাসেফিক ইকনোমিক কনফারেন্স। যেটাতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যোগদান করেছেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, কাজেই ব্লিঙ্কেনের বক্তব্য বাংলাদেশকে উদ্দেশ করে দেয়া না। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টসকর্মী কল্পনা আক্তার। আরও দুটি দেশের কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যু তিনি উল্লেখ করেননি। গার্মেন্টস কিংবা টেক্সটাইলের কিছু ছিল না তাতে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, শক্তিশালী করতে, পুনপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়। আপনারা জানেন, অনেক দেশের অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। সেই দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীকর্মীদের বেতন কম। এটা তাদের জাতীয় ইস্যু। সেখানে তারা একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি গ্রীষ্মে লন্ডন সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে কমনওয়েলথের মহাসচিবের বৈঠক হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন যে পর্যবেক্ষক পাঠালে আপনাদের স্বাগত জানাবো। তখন কমনওয়েলথ সেক্রেটারির কার্যালয়ের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন নিয়ে কাজ করা বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলদেশে অবস্থান করছেন। তারা নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। তারাই ধারাবাহিকতায় আমার সাথে তাদের বৈঠক হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা তাদের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন। তারা বলেছেন, অন্যান্য মিশনের মতো এটি একটি অগ্রবর্তী মিশন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ফিরে গিয়েই প্রতিবেদন দেবেন। সময় যে খুবই সংক্ষিপ্ত, সেই বিষয়ে তারা ওয়াকিফহাল। শেষ মুহূর্তে আসায় দ্রুতই প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, তারা আসবেন কি আসবেন না, কমনওয়েলথের কর্তাব্যক্তিরা সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছি, তারা আসবেন। আমরা নিশ্চিত করেছি, তাদের লজিস্টিক প্রটোকলের সাপোর্টের জন্য তারা আমাদের প্রটোকল বিভাগের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আপনারা জানেন, নির্বাচন নিয়ে একটি অস্থায়ী অনুবিভাগ আমরা তৈরি করেছি, সেই দফতরের ডিজির সঙ্গে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
শাহরিয়ার আলম জানান, কেবল নির্বাচনই না, জলবায়ু, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসনসহ আরও অনেক বিষয়াদি নিয়ে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয় আছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা অব্যাহত কাজ করে যাবো।
নির্বাচন কেন্দ্রীক বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা কিছু বলেছেন কিনা, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নির্বাচনকালীন একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থাকে, সেটা তারা জানেন। তারা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছেন। তারা এ বিষয়ে জানেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসতে পারে বলে সরকার আশা করে বলে দুদিন আগে আপনি বলেছিলেন। সেই প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দলের মুখপাত্র নই। আমি আশা করি। আমার দল আশা করে এমনটা বলিনি।
কীসের ভিত্তিতে এই আশার কথা বলেছেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করাতে তাদের যে কোনো কথা কিংবা আবেদন, বিদেশিদের কাছে আকুতি-মিনতি একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এটা সার্বজনীন সত্য। তফসিল অনুসারে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। কাজেই সেই দিন পর্যন্ত নির্বাচনে আসাটা সবার জন্য উন্মুক্ত। সরে যাওয়ারও সুযোগ আছে।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিরা নিজেদের কোনো প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, নাহ, এমন কিছু তারা বলেনি। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে কোনো একটি বিশেষ দলের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক না। তবে সবার অংশগ্রহণ নির্বাচনের সৌন্দর্য বাড়ায়। আবার একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের দিয়ে কেবল শোভাবর্ধনের জন্য লোক দেখানোর প্রয়োজন নেই। এটা বাধ্যতামূলক কিছু না।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :