হিজড়া জনগোষ্ঠী দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক একটি সম্প্রদায়। এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদেরকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে যেতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে বিশেষজ্ঞরা তাগিদ দিয়েছেন। একইসাথে বক্তারা বলেন, একমাত্র সমাজের সবার সহযোগিতাই পিছিয়ে পড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে আসতে ও মানবসম্পদে পরিণত করতে পারে।
আজ বুধবার হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করা দুই সংগঠন ‘আশার আলো সোসাইটি’ এবং ‘দুর্জয় নারী সংঘ’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ‘ট্রান্সজেন্ডার ভিজিবিলিটি, রিপ্রেজেন্টেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে।
এসময় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা পিছিয়ে আছে একথার সাথে আমি একমত নই। আমরা তাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছি। এজন্য আমাদেরকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে আমরা কোটা রাখার জন্য চিঠি দিয়েছি। ইতিবাচক কন্টেন্ট দিয়ে অনেক কিছু জানা যায়। হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে নেতিবাচক কিছু করা হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনে সেটি থাকলে ভালো হয়।
ইউএনএইডস’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান বলেন, ট্রান্সজেন্ডারদের কোনো কারণে গ্রেপ্তার করা হলে তাদেরকে পুরুষদের সেলে রাখা হয়। এটি ভয়াবহ। এজন্য আমাদেরকে জেন্ডার আইডেন্টিটি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
সোয়সা’র কান্ট্রি কোর্ডিনেটর জান্নাত হুসনা বলেন, ঢাবি, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে বুঝা যায় হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা কত সমস্যার মধ্যে আছেন। সেজন্য পলিসি, আইন পরিবর্তনের সাথে ধারণাগত বিষয়ে কাজ করতে হবে।
ইউএনএফপিএ’র ডা. রোকসানা বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের কী চিকিৎসা দিতে হবে তা অনেক চিকিৎসক জানেন না। ওই চিকিৎসকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এছাড়া জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে হবে।
দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তাদের কর্মসংস্থানসহ মূলধারায় আনতে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। গণমাধ্যমে তাদেরকে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া শব্দের ব্যবহার নিয়ে যে বিতর্ক আছে তার অবসান হওয়া দরকার। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের অন্যান্য ভাই-বোনদের মতো বাবা-মায়ের
সম্পদ প্রাপ্তি নিশ্চিতে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।
কী-নোট প্রেজেন্টেশনে ট্রান্সজেন্ডার উপস্থাপিকা অনিন্দিতা বলেন, সরকার আইনি স্বীকৃতিসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কাজ শুরু করেছে। তবে সেটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। এজন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে আশার আলো সোসাইটি এর উপ-নির্বাহী প্রধান কে, এস, এম, তারিক বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সরকার অনেক কিছু করে। কিন্তু তারা জানে না, সেজন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। সেসব সমস্যায় যেন ভবিষ্যতেও না পড়তে হয়, সেজন্যই এ আয়োজন।
এছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে হিজড়াদের এনআইডি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, চাকরি প্রাপ্তি, ঋণ সহায়তা, যাবতীয় কুসংস্কার দূরীকরণ, লিঙ্গবৈষম্য, শারীরিক গঠন, আবেগ/মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্নতা ঠেকানো, সহিংসতা ও অবিচার রোধসহ তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বক্তারা তাগিদ দেন।
সমাপনী বক্তব্যে আশার আলো সোসাইটি এর নির্বাহী প্রধান মো: আব্দুর রহমান উপস্থিত সকলকে স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং গোলটেবিল বৈঠকে গ্রহণকৃত অ্যাকশন পয়েন্টগুলো বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা আশা করেন।
পিএলএইচআইভি নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, পিডিসি’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এসএম সিরাজুল ইসলাম, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যম ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :