দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। কিশোরীর কানের দুলের মতো হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ রঙের ঝোপা-ঝোপা সরিষা ফুল। সবুজ কচি পাতার ফাঁকে হলুদ বর্ণের সরিষা ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে। শীতের শুরুতেই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ফসলের মাঠ জুড়ে দেখা যায়, সরিষা ফুলের হলুদ বর্ণের সমারোহ। এই সরিষা ফুল নিয়ে কবিদের হাজারও কবিতা।
সরিষা সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবি রুহুল আমীন রৌদ্র লিখেছেন, "সরষে ফুল, সরষে ফুল, হাওয়ায় হাওয়ায় খেলে দোল, হিম হিম পরশে, ঝিমঝিম নড়ে সে, বালিকার কর্ণে, অপরূপ বর্ণে, খেলে যায় দুল দুল, সরষে ফুল, সরষে ফুল। প্রকৃতির মাঝে, অপরূপ সাঁজে, সেঁজেছে বউ যে, মেতেছে মৌ যে, ভরা এ পউষে, মধুমাখা ক্ষণে, প্রকৃতির সনে, সুবাসে মশগুল, সরষে ফুল, সরষে ফুল ।"
শীত মৌসুম আসতে না আসতেই প্রকৃতি প্রেমীরা ডুবে যায় সরষে ফুলের সৌন্দর্যে। শিশু থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন বয়েসের নারী পুরুষ এই সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নেমে পড়ে ফসলের মাঠে। স্মৃতির মনিকোঠায় ধরে রাখতে তারা মেতে উঠে সেলফিতে।
এ সময় শহর থেকে অনেক প্রকৃতি প্রেমি দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন গ্রামের মাঠে ঘাটে।
এমমই দৃশ্য চোখে পড়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে সবে মাত্র উঁকি দিচ্ছে সদ্য ফোঁটা সরিষা গাছের হলুদ বর্ণের ফুল। আর এই সরিষা ফুলের সাথেই যেন মিশে আছে হাজারও কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। চলতি রবি মৌসুমেও সরিষা চাষে লাভের স্বপ্নে বিভোর উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে বারি-১৪ ও বারি -১৫ সহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ আরও বাড়তে পারে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। উন্নত জাত ও দেশীয় জাতের রাই, চৈতা ও মাঘি সরিষার বীজ বপন করছেন কৃষকরা। তবে প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি -১৫ ফলন বেশি হওয়ায় এ দুই জাতের সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী বলে জানান কৃষকেরা।
উপজোলার দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর এলাকার এনায়েতপুরের নাসির উদ্দীন জানান, আমাদের চরাঞ্চলে সরিষার চাষ বেশ ভালই হয়। এই সরিষা ফুলের দৃশ্য দেখতে জেলা শহর থেকে অনেক প্রকৃতি প্রেমি এই চরাঞ্চলে আসেন। আমি এবছর ৩ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত গাছের অবস্থা বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে ভাল ফলনের আশা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, শীত মৌসুম আসলেই শহর থেকে প্রকৃতি প্রেমিরা গ্রামে ছুটে আসেন। এটা সাধারণ শীত মৌসুমে সরিষা ফুল ফুটলেই তারা আসেন। এটা বেশ ভাল। শহরের যান্ত্রিক জীবনযাপন ভেদ করে কিছুটা সময় হলেও শেকড়ের গন্ধ পায় তারা। মিশে যায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের মাঝে।
তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় বিগত বছরের তুলনায় এবছর সরিষার আবাদ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষার চাষ আরো বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :