ঘড়ির কাটা যখন ঠিক রাত ১২টা তখনই শুরু হয়েছে নতুন একটি বছর। ২০২৩ সালের ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে শুরু হয় ২০২৪ সাল।
একুশে সংবাদ.কম এর সকল পাঠক, দর্শক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা হ্যাপি নিউ ইয়ার ‘২০২৪’।
ইংরেজি নববর্ষ সাধারণত পাশ্চাত্য সভ্যতার। তবে আমাদের দেশেও এর হাওয়া লেগেছে। বাংলা নববর্ষের মতো না হলেও, বেশ ঘটা করেই পালন হয় বছরের শেষদিন অর্থাৎ থার্টি ফার্স্ট নাইট। রাত জেগে উদযাপিত হয় বিদায় আর স্বাগতম জানানোর উৎসব।
ইদানীং মনে হচ্ছে বছরগুলো দৌড়ে চলে যাচ্ছে। অনেক না পাওয়ার বেদনা থাকে বিগত বছরজুড়ে। কারও মনে থাকে বিষাদের ছায়া, প্রিয় মানুষটিকে ছাড়া নতুন একটি বছর শুরু করার। তাকে আর কখনো ফিরে না পাওয়ার হাহাকার।
নতুন বছর শুরু হওয়া মানেই কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর অতীত হয়ে যাওয়া। স্মৃতির পাতায় ধুলো পড়ে যাওয়া। তবু জীবন থেমে থাকে না। সে নদীর স্রোতের মতো বহমান। কষ্ট বুকে নিয়েই পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে কষতে আমাদের পথ চলতে হয়।
নিউ ইয়ার পালন শুরু হয় চার হাজার বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার অব্দ নাগাদ। মেসোপটিমিয়ান সভ্যতার মোট চারটি ভাগ রয়েছে- সুমেরিয় সভ্যতা, ব্যবিলনিয় সভ্যতা, অ্যাসরিয় সভ্যতা ও ক্যালডিয় সভ্যতা। এর মধ্যে নিউ ইয়ার উৎসব প্রথম শুরু হয় ব্যবিলনিয় সভ্যতায়।
ওই যুগেও বেশ ধুমধাম করে জাঁকজমকভাবে নিউ ইয়ার ডে পালন করা হতো। তবে তা ১ জানুয়ারির দিনে নয়। তখন নিউ ইয়ার ডে ধরা হতো বসন্তের প্রথম দিনকে। বসন্তকালের প্রথম দিনেই পালন করা হতো বর্ষবরণ উৎসব। সেই যুগে ক্যালেন্ডারের প্রচলন ছিল না। আকাশে চাঁদের অবস্থান দেখে বছর গণনা করা হতো। চাঁদ দেখেই পালন করা হতো এই উৎসবও। বসন্তের যেদিন প্রথম চাঁদ উঠত সেদিনকেই নিউ ইয়ার ডে হিসেবে ধরা হতো। এই উৎসব টানা ১১ দিন ধরে চলত। ১১ দিনের আবার আলাদা আলাদা তাৎপর্যও ছিল।
এবার আসা যাক রোমান সভ্যতায়। নিউ ইয়ার পালন করতেন রোমানরাও। রোমান সম্রাজ্যে ১ মার্চকে নববর্ষ হিসেবে ধরা হতো। এদের অবশ্য একটি ক্যালেন্ডারও ছিল। রোমানদের এই ক্যালেন্ডারে মাস ছিল মোটা ১০টা। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির কোনো উল্লেখ ছিল রোমান ক্যালেন্ডারে। পরে অবশ্য নুমা পন্টিলাস নামের এক সম্রাট ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি যোগ করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে বর্ষবরণের দিন হিসেবে ২৬ মার্চ তারিখটিকে ধরা হতো। পরে সম্রাট পন্টিলাস ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি যোগ করার পরে ১ জানুয়ারি দিনটিকেই বর্ষবরণের দিন হিসেবে ঠিক করে দেন। তখন থেকেই ঠিক করা হয় যে ১ জানুয়ারি দিনটি হলো নিউ ইয়ার ডে বা বর্ষবরণ দিন। কিন্তু এই দিনটি নিউ ইয়ার ডে হিসেবে ঠিক করা হলেও, মার্চের ১ তারিখকেই নিউ ইয়ার ডে হিসেবে পালন করতেন রোমানরা।
পরে ৩৬৫ দিনে এক বছর হিসাবে ধরার ঘোষণা করেন জুলিয়াস সিজার। তখন আবারো ১ জানুয়ারিকেই নিউ ইয়ার হিসেবে ধরার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে সমস্যা ছিল সিজারের ক্যালেন্ডারেও। পরে অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস নামের এক চিকিৎসক এই সমস্যা দূর করে দেন। আজও সেই ক্যালেন্ডারেরই প্রচলন রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
পোপ গ্রেগরির নাম অনুসারে এই নতুন ক্যালেন্ডারের নাম হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। প্রায় ৪৩২ বছর আগে ১৮৫২ সাল নাগাদের ঘটনা। তবে থেকেই ভালোমতো শুরু হলো ক্যালেন্ডারের প্রচলন। বিশ্বব্যাপী এই ক্যালেন্ডার ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ১ জানুয়ারির বর্ষবরণ উৎসব হিসাবে পালন হতে লাগল। এ দিন পৃথিবী জুড়ে সবাই হ্যাপি নিউ ইয়ার উৎসব পালন করেন।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :