AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রাঙ্গুনিয়ায় ভোট উৎসব, ভোট প্রদানের হার প্রায় ৭০ শতাংশ


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯:৪২ পিএম, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪
রাঙ্গুনিয়ায় ভোট উৎসব, ভোট প্রদানের হার প্রায় ৭০ শতাংশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৭ (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক) আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৬ ভোট পেয়ে এই আসন থেকে টানা চতুর্থবার সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। 

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ফ্রন্টের এড. ইকবাল হাছান মোমবাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৮ হাজার ৭৬৭ ভোট। ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোটারের উপস্থিতির পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিলো উৎসবের আমেজ। এই আসনে ভোট প্রদানের হার ৬৯.৪৩ শতাংশ এবং নৌকা মার্কার প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৯৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন।

রোববার সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-৭ আসনের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৯৫ ও বোয়ালখালী উপজেলার ৮টি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে টানা ভোটগ্রহণ চলে। রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার কোথাও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ১০৩টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। 

প্রায় সব কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ও সমর্থকদের সরব উপস্থিতি পাওয়া যায় এবং কেন্দ্রের বাইরে ছিলো ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। এমন কি শারীরিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী, শারীরিক প্রতিবন্ধি, অন্ধ ব্যক্তি এবং অনেক বৃদ্ধ নারী-পুরুষকেও অন্যের সাহায্যে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে দেখা গেছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সাথে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, সুপ্রিম পার্টির মনোনীত ৫ প্রার্থী।

কার্যত আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদের সাথে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো না। কিন্তু এরপরও প্রচারণার শুরু থেকেই একের পর এক চমক দেখিয়েছেন তিনি, যা দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিলো। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু সাইকেল চালিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন। প্রতীক পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে নৌকাযোগে নদী পেরিয়ে সড়কে সাইকেল চালিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন ড. হাছান মাহমুদ। পরের দিন তিন শতাধিক যানবাহন নিয়ে ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ব্যতিক্রমী র‌্যালিও দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। 

এরপর পাঁচটি জনসভা, প্রতিটি ইউনিয়নে পথসভা করে নৌকা প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন। তাঁর কর্মী সমর্থকরাও বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, মিছিল-মিটিংসহ নানাভাবে বিরামহীন ভোটের প্রচারণা করেছেন।  অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, এ সব কারণেই কেন্দ্রে এতো বেশি ভোটার উপস্থিতি হয়েছে এবং ভোট প্রদানের হার এতো বেশি হয়েছে। ভোটারদের প্রায় সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন এবং নৌকা মার্কার প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৯৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন।

ভোটের দিন সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে চলেছিলো নির্বাচনী উৎসব। প্রতিটি উৎসব তখনই সার্থক হয়ে ওঠে যখন তাতে সব ধরনের লোকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। আর এমনই উৎসব দেখা গেছে রাঙ্গুনিয়ার ভোট কেন্দ্রগুলোতে। কেন্দ্রের ভেতর সব প্রার্থীর এজেন্ট, বাইরে দীর্ঘ লাইন, নির্দিষ্ট দূরত্বে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবশ্রেণির মানুষ উপভোগ করছেন ভোট উৎসব। শীতের সকালে প্রথম দিকে লাইন না থাকলেও সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে এসে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। 

কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। এ দিন সকাল ১০টার দিকে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মধ্য নোয়াগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, মোট ২৮৯০ ভোটের মধ্যে ৪০০ ভোট সংগৃহীত হয়েছে। বিকাল ৩টার দিকেও কেন্দ্রটিতে দীর্ঘ লাইন ছিলো। ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রটিতে ৭০ শতাংশ ভোট সংগৃহীত হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে। বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একইচিত্র দেখা গেছে। এ সময় দেখা যায় পেলেন বড়ুয়া নামে ৬২ বছর বয়সী পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক ব্যক্তিকে দু‍‍`জন কোলে চড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ শেষে যাওয়ার পথে কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই অঝোর ধারায় কাঁদলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‍‍`তিন বছর ধরে শয্যাশায়ী ছিলাম। ভেবেছিলাম জীবনে আর ভোট দেয়া হবে না। কিন্তু এলাকার ভাই-ভাতিজাদের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছি এবং ভোটটা নৌকা মার্কায় আমাদের সন্তানকে দিয়েছি। সম্ভবত এটাই আমার জীবনের শেষ ভোট।‍‍`

কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বদিউল খায়ের লিটন চৌধুৃরী বলেন, ‘ভোর সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটাররা এসেছেন। দিনব্যাপী সুশৃঙ্খল এবং উৎসবমুখর পরিবেশে চলেছে ভোটগ্রহণ। এলাকাবাসী কোন গুজবে কান না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে হাসিমুখে ভোট দিতে পেরেছেন। শুধু পেলেন বড়ুয়াই নয়, এই কেন্দ্রটিতে অন্ধ বৃদ্ধাসহ শারীরিকভাবে অক্ষম অনেকেই ভোট দিয়েছেন।’

চন্দ্রঘোনা আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১২টার দিকে সাধারণ মানুষ লাইন ধরে ভোট দিচ্ছে। কেন্দ্রের বাইরে শত শত নেতা-কর্মী, উৎসুক মানুষ জড়ো হয়েছেন। এ সময় দেখা যায় ১১৫ বছর বয়সী ছালেহ আহমদ নামের এক বৃদ্ধ পাশের আধুরপাড়া গ্রাম থেকে কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন। গাড়ি থেকে নাতির কোলে চড়ে ভোট প্রদান শেষে বের হয়ে নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। দিন শেষে এই কেন্দ্রে ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের এবং অধিকাংশ ভোট নৌকা প্রতীকে সাধারণ মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান। 

সরফভাটায় কেন্দ্রে ভোট দিতে দেখা গেছে মানসিক প্রতিবন্ধি মো. মুছাকেও। সারাবছর তথ্যমন্ত্রী রাঙ্গুনিয়া এলে, তাকে দেখেই গাড়ি থামিয়ে টাকা সাহায্য করতেন, প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, কথা বলার জন্য একটা মোবাইলের আবদার করলে তাও কিনে দিয়েছেন। তাই তাকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে জানান। 

তথ্যমন্ত্রীর নিজ ইউনিয়ন পদুয়ার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রামে বসবাস করা অনেকেই নিজ গ্রামে ভোট উৎসবে সামিল হতে এসেছেন বলে জানান। বিভিন্ন সম্প্রদায় অধ্যুষিত এই ইউনিয়নে শতবর্ষী বৌদ্ধ ভিক্ষু থেকে শুরু করে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। এই ইউনিয়নে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিলো এবং প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ নৌকা প্রতীকে ঘরের সন্তানকে ভোট দিয়েছেন বলে জানান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি। 

এই ইউনিয়নের সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরপর পদুয়া, শিলক, সরফভাটা, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভাসহ উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে তাকে।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কথা হয় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মুছা আহমেদ রানার সাথে। তিনি জানান, এজেন্ট বসতে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট চলছে। এই ভোটে তিনি পরাজিত হলেও মেনে নেবেন বলে জানান। ভোট গ্রহণ শেষে জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী খোরশেদ আলম জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে। ড. হাছান মাহমুদের উন্নয়ন আর জনপ্রিয়তার কাছে হেরেছেন তিনি।

নৌকা প্রতীকের একচেটিয়া ভোট প্রাপ্তি এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রে বিপুল ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে জানতেই চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার জানান, বিগত ১৫ বছরে পিছিয়ে পড়া এই জনপদকে আধুনিক রাঙ্গুনিয়ায় পরিণত করতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন করেছেন। পাঁচ হাজারের অধিক যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ব্যস্ততম মন্ত্রী এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকা স্বত্ত্বেও প্রতি সপ্তাহে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসতেন এবং দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জন্য ভোর সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। 

গত ১৫ বছর ধরে এভাবে তিনি সবার জন্য তাঁর দরজাটি খুলে রেখেছেন। প্রচারণাকালে ড. হাছান মাহমুদ সবাইকে একটা দিন তার জন্য দরজা খোলা রাখার আহবান জানিয়েছিলেন। তাই সাধারণ মানুষ দল-মত নির্বিশেষে সবাই তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছেন এবং সবাই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বেশিরভাগ ভোট তাঁকে দিয়ে বিজয়ী করেছেন।

উল্লেখ্য বিজয়ী এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াও জাতীয় পার্টির মুছা আহমেদ রানা (লাঙ্গল) ২ হাজার ৩০৮ ভোট, তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম  (সোনালী আঁশ) ১ হাজার ৩৩১ ভোট, ইসলামীক ফ্রন্টের আহমদ রেজা (চেয়ার) প্রতিকে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৯০ ভোট, সুপ্রিম পার্টির মোরশেদ আলম (একতারা) প্রতিকে পেয়েছেন ১ হাজার ১৩০ ভোট। ১০৩ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯১। এরমধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৬, মোট ৬৯.৪৩ শতাংশ ভোট সংগৃহিত হয়েছে। সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাঙ্গুনিয়ার ইউএনও রায়হান মেহেবুব এসব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!