AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিস্ময়কর সফল ব্যক্তি প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান


Ekushey Sangbad
বশির হোসেন বাবু
০২:০০ পিএম, ১১ জানুয়ারি, ২০২৪
বিস্ময়কর সফল ব্যক্তি প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান

ঢাকা মহানগরীর সিংহভাগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি)। এত বড় কর্মযজ্ঞ চলা একটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব কত? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে, রাজধানীতে কার্যক্রম চালানো এই সংস্থার প্রধানের বিদায় যখন ছোট-বড় সকল পদের কর্মীকে কাদায়, তখন বোঝা যায় তিনি কতটা অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ। ২০১৭ সালের ২৮ জুন ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে পথ চলা শুরু করেন প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান। প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশের কাছে প্রশংসনীয়। নানামুখি পদক্ষেপে সুনাম কুড়িয়েছেন কোম্পানির এমডি। মাত্র ৬ বছরের মধ্যে ডিপিডিসি এক বিস্ময়কর সফলতায় পৌঁছেছে। প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের বয়স ৬৫ বছর। এই বয়সেও এমডি হয়ে কাজ করে গেছেন দিন-রাত সমান তালে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

গতকাল বুধবার ছিলো ডিপিডিসিতে তার শেষ কর্মদিন। তার বিদায়কালে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছিল অন্ধকার মুখ। তাকে বিদায় জানাতে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

তাদের ভাষ্যমতে, এমডির মত এত বড় পদে থেকেও কখনো কারো সঙ্গে রেগে কিংবা উচ্চস্বরে কথা বলেননি। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কাজ আদায় করে নিতেন। যোগ্যতা বিবেচনা করে বিধি মোতাবেক দিতেন বদলী-পদোন্নতি। কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা সেবাগ্রহীতা, সবার সঙ্গে কথা বলতে একভাবে। যে কেউ কোনো প্রয়োজনে গেলে অপেক্ষায় রাখতেন না। চেষ্টা করতেন মিনিটের মধ্যেই সমস্যার সমাধান করার। ফলে বিদ্যুৎ সেক্টরে অনুকরণীয় নাম হয়ে ওঠে প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান।

এছাড়া, ডিপিডিসির আওতাভুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির নানা ঘটনা উদঘাটন করা হয়েছে তার মেয়াদে। এতে ব্যাপক পরিমাণে চুরি হওয়া এনার্জি ইউনিট পুনরুদ্ধার হয়েছে। যেখানে এনওসিএস দপ্তরসমূহের অগোচরে বিদ্যুৎ চুরি হত, সেখানে বিদ্যুৎ চুরি ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে সিষ্টেম লস হ্রাসসহ ডিপিডিসি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দালাল কিংবা মিটার রিডারদের ব্যাপারেও গ্রাহকরা সতর্ক হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচুর অবৈধ মিটারও জব্দ করা হয়েছে। যা ইতোপূর্বে হয়নি।

এছাড়া, বিদ্যুৎ চুরি, বিদ্যুতের দালাল এবং দুর্নীতিবাজ সিএসএস কর্মীদের ব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এনওসিএস দপ্তরে, হটলাইন, ওয়েবসাইট এবং স্পেশাল টাস্কফোর্সে দপ্তরে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হয়।

বিকাশ দেওয়ান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে দীর্ঘ বছর চাকরি শেষে প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও নকশা) হিসেবে কর্মজীবন শেষ করেন। সেখানেও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। কুড়িয়েছেন ব্যাপক প্রশংসা। এরপর ডিপিডিসিতে নিয়োগের পর টানা ৬ বছর সেখানে বিকাশ দেওয়ান নেতৃত্ব, বহুমুখী কাজের স্পৃহা ও দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন।

ডিপিডিসি’র ব্যস্তময় জীবন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে উপভোগই করেছি। আবার দায়বদ্ধতার কথাটাও ভাবি। মনে হয় অনেক কিছুই করার ছিল। আবার যা করছি, তা কতটা কাজে লাগছে সেটা নিয়েও ভাবতে হয়। কোম্পানির সঙ্গে জড়িত শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী একই পরিবার, তাদের প্রতিও দায়িত্ব আছে। সব মিলিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাজে লাগাচ্ছি কি না, সেটা নিয়েই ভাবতাম।

ব্যক্তি জীবন নিয়ে তিনি জানালেন, খুব সকালেই ঘুম থেকে ওঠেন। অভ্যাসটা ছাত্রজীবন থেকেই রয়ে গেছে। উঠেই সবার আগে সেলফোনটা দেখেন। তাছাড়া ২৪ ঘন্টাই ফোন রিসিভ করতেন। আবার সমস্যাও সমাধান করতেন। তিনি কখনো নিজেকে আলাদা করে দেখতেন না। তার চোখে ছিলো সবাই সমান। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে অফিসে চলে আসতেন। জানালেন, অফিসটা আমার পছন্দের একটা জায়গা। এখানে এসে একধরনের শান্তি পাই। মাঠে ভিজিটে গেলেও আমার খুব ভালো লাগে। আসলে কাজ করতেই আমার ভালো লাগে। মনে করি, কোনো কিছু করতে চাইলে কাজের জায়গাটিকে ভালো লাগাতে হবে।

বিকাশ দেওয়ান জানালেন, ডিপিডিসি এখন বিশ্বের দরবারে সবাই চেনে। নানা কাজে পুরস্কৃত হয়েছি। মূলকথা হচ্ছে, গ্রাহকদের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া। আমার মেয়াদে আবেদন করে কয়েক ঘন্টায় গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। তাছাড়া কর্মকর্তাদের একটাই পরামর্শ ছিলো; কাজ করে যেতে হবে। থাকতে হবে নিষ্ঠা ও ধৈর্য।

প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি রাঙামাটিতে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (চুয়েট) থেকে বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রী অর্জন করেন।

জানা গেছে, কম খরচে ডিপিডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ঢাকার স্বনামধন্য ৫টি হাসপাতালের (ল্যাব এইড, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, ইউনাইটেড হসপিটাল, এভার কেয়ার ও আসগর আলী) সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, যা আগে কখনও হয়নি। এছাড়া, মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ ড্যাশ বোর্ড আপগ্রেড করা হয়েছে। এছাড়া আইসিডিডিআরবি’র সহায়তায় সব কর্মচারীদের ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়। কোভিডকালীন ঢাকার সব হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। যার ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।


একুশে সংবাদ/ব.হ.প্র/জাহা

Link copied!